New District Arambagh: ২০০ বছর আগেই উঠেছিল দাবি? নতুন জেলা হওয়ার জন্য কতটা তৈরি আরামবাগ?
New District Arambagh: রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আরামবাগকে আলাদা সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ঘোষণা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাজাতে। এখানেই অনেকে প্রশ্ন করছেন তাহলে প্রশাসনিকভাবে আলাদা জেলার স্বীকৃতি দিলে সমস্যাটা কোথায়?

আরামবাগ: ক্রমেই জোরালো হচ্ছে নতুন আরামবাগ জেলার দাবি। বিডিও অফিস-সহ মহকুমা শাসকের অফিসে ইতিমধ্যেই আরামবাগ জেলার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে পদ্ম শিবির। আরামবাগের একাধিক এলাকাকে পৌরসভা করারও দাবি উঠেছে। অনেকেই তুলনা টানছেন শ্রীরামপুরের সঙ্গে। তুলে আনা হচ্ছে জনসংখ্যার তত্ত্বও। এদিকে আরামবাগ শহরের ভেতর দিয়ে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও হাওড়া জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগের জন্য রয়েছে সড়ক পথ। যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত।
জেলার দাবি যাঁরা জোরালো করছেন তাঁদের দাবি, বর্তমানে আরামবাগ শহরের ভিতর দিয়ে চওড়া রাস্তা জেলা শহরের জন্য উপযুক্ত। আরামবাগে এমন কিছু সরকারি অফিস আছে যেখানে জেলার কাজগুলি সবই প্রায় হয়ে যায়। অর্থাৎ জেলা তৈরির জন্য পরিকাঠামোগত দিক থেকেও অনেকটা এগিয়ে রয়েছে আরামবাগ। এদিকে আরামবাগ মহকুমা থেকে জেলা সদর যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা। এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। এর ফলে জেলার অন্য অংশের তুলনায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বা উন্নয়নের স্বাভাবিক গতি পিছিয়ে পড়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকার অনেকেই। রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আরামবাগকে আলাদা সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ঘোষণা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাজাতে। এখানেই অনেকে প্রশ্ন করছেন তাহলে প্রশাসনিকভাবে আলাদা জেলার স্বীকৃতি দিলে সমস্যাটা কোথায়?
ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই বলছেন, যে কোনও জেলা সদর সাধারণত জেলার কেন্দ্রের কাছাকাছি হয় (যেমন একটা বৃত্তের কেন্দ্র)। কিন্তু হুগলি জেলাটি ডিম্বাকৃতি। একেবারে এক প্রান্তে চুঁচুড়া আর ঠিক বিপরীত প্রান্তে আরামবাগ মহকুমা। গোঘাট থানা তো অনেক দূর। এর ফলে প্রশাসনের কর্তাদের প্রশাসনিক কাজে চুঁচুড়া যেতে অনেক সময় ব্যয় হয়। যার প্রভাব পড়ে নিজের কর্ম ক্ষেত্রে।
অভিযোগ উঠেছে বঞ্চনারও। বর্ষায় প্রায়ই বন্যা কবলিত আরামবাগে বন্যার ত্রাণ এলে সেটা হুগলী জেলায় প্রতিটা ব্লকে ভাগ হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের হাহাকার থাকলেও প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়, বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্য নিয়ে।
কেউ কেউ আবার একেবারে ইতিহাসের খতিয়ান তুলে বলছেন জেলার দাবি তো আজকের নয়, প্রায় দু’শো বছর আগের। তখন থেকেই আলাদা জেলার দাবি ধীরে ধীরে উঠছিল। ইতিহাস বলছে ১৮৪৬ সালে হুগলি জেলাকে প্রশাসনিক কাজে সুবিধার জন্য মহকুমা হিসেবে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম, শহরকেন্দ্রিক দ্বারহাট্টা (শ্রীরামপুর) আর দ্বিতীয় পিছিয়ে পড়া গ্রামকেন্দ্রিক জাহানাবাদ (আরামবাগ)। । ১৮৭২ সালে ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা সহ জাহানাবাদ (আরামবাগ) ও গোঘাট হুগলি জেলা ছেড়ে মেদিনীপুরে চলে যায়। জাহানাবাদ আর গোঘাট ৭ বছর পর ফের ফিরে আসে। কিন্তু, চন্দ্রকোনা ও ঘাটাল আর ফেরেনি।
তথ্য বলছে, হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমাই একমাত্র মহকুমা যেখানে ৯৫ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর শ্রীরামপুর মহকুমার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা মাত্র ২৭ শতাংশ। এদিকে শেষ বিধানসভার আগেই আরামবাগের মানুষকে বিজেপি কথা দিয়েছিল ক্ষমতায় আসলে আরামবাগ জেলা তৈরি হবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক কাজের সুবিধার্থে আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপিও আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৈরি করেছে। আরামবাগ শহরকেন্দ্রিক বিজেপির সুবিশাল জেলা পার্টি অফিসও তৈরি হয়েছে।
