কোন্নগর: কোনও মতেই রাশ টানা যাচ্ছে না হুগলির গঙ্গার ঘাটগুলিতে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায়। বুধবার ফের একইভাবে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে হুগলিতে। তবে এবারের ঘটনাস্থল কোন্নগরের বারো মন্দির ঘাট। সদ্য সমাপ্ত মাধ্যমিকের এক পরীক্ষার্থী দুপুরে গঙ্গায় নেমেছিল। কিন্তু জলের টানে তলিয়ে যায় সে। এমনকি বিষয়টি দেখতে পেয়ে ওই পড়ুয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ঘাটে কর্মরত কোন্নগর পুরসভার বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মী। কিন্তু তাঁর চেষ্টাও বিফলে যায়। বাঁচানো যায়নি সুজয় সাহা নামে মাধ্যমিকের ওই পড়ুয়াকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রিষড়া বারুজীবী এলাকার বাসিন্দা সুজয়। রামকৃষ্ণ আশ্রমের ছাত্র হিসেবে এই বছর মাধ্যমিকও দিয়েছিল। বুধবার সকালে কিছু বন্ধুর সঙ্গে স্নান করতে এসেছিল কোন্নগরের বিখ্যাত বারো মন্দির ঘাটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, সেই সময় গঙ্গায় জোয়ার চলছিল। ফলে জলের টান ছিল ব্যাপক। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই জলে নামে সুজয়। কিন্তু শেষমেশ জলের টানে আর নিজেকে সামাল দিতে পারেনি সে। মুহুর্তের মধ্যেই তলিয়ে যায় সে।
এদিকে, সেই সময় ওই ঘাটে কাজ করছিলেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী রাজদীপ দেবনাথ। তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনে উদ্ধারের জন্য তিনিও ঝাঁপ দেন গঙ্গায়। কিন্তু জলের টান বেশি থাকায় সুজয়ের কাছে পৌঁছানোর আগেই সে তলিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমি শোনার পরেই বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কাছে গিয়েও আমি টেনে আনতে পারিনি। আসলে সেই সময় জলের টান প্রচণ্ড ছিল। অন্যদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে কোন্নগর ফাঁড়ির পুলিশ ও পুরসভার কর্মীরা। তাঁদের যৌথ উদ্যোগে লঞ্চ নিয়ে গঙ্গায় তল্লাশি অভিযান চলে। কিন্তু তাতেও উদ্ধার করা যায়নি ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে।”
প্রসঙ্গত, বুধবারের ঘটনা বাদ দিয়ে শেষ ১০ দিনে ৮ জন হুগলির বিভিন্ন ঘাট থেকে গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। দিনের পর দিন একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চিন্তার ভাঁজ ফেলছে প্রসাশনের কপালে। যদিও সাধারণ মানুষের দাবি, গঙ্গার ঘাটগুলিতে প্রশাসনিক নজরদারি নেই। সেই কারণেই বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। যেমন ১৮মার্চ চুঁচুড়া তুলো পট্টি ঘাটে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায় রূপম দাস নামে এক যুবক। পরদিন তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এরপর দোলের দিনেই চুঁচুড়ারই অন্য আর একটি ঘাট অর্থাৎ ঘণ্টা ঘাটে শিবম বসাক নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। দোলের পরদিন তুলোপট্টি ঘাটে গঙ্গার চড়ে স্বামীর সঙ্গে স্নান করতে নেমে বানের জলে ভেসে যান মধ্যমগ্রামের তরুণী পিয়ালী কর্মকার।
ঠিক তার দু’দিন পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এরপর গত ২৪ তারিখ হুগলি জেলখানা সংলগ্ন ঘাটে বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেতে খেতে রিল ভিডিয়ো শ্যুট করার পর স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায় রাকেশ রজক। তাঁর এখনও খোঁজ মেলেনি। এরপর ব্যান্ডেল চুনুমিঞার ঘাটে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায় বছর ষোলোর দুই কিশোর। ব্যান্ডেল মানুষপুর বস্তির অনিকেত প্রসাদ ও গোলু পাশোয়ান কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে স্নান করতে যায়। তিনজনকে গঙ্গায় ডুবতে দেখে স্থানীয়রা একজনকে উদ্ধার করতে পারে। বাকি দু’জন তলিয়ে যায়। ফলে দিনের ঘটনার পর আম আদমির প্রশ্ন, কবে থামবে নজরদারির অভাবে প্রাণ যাওয়ার পালা?