Rabindranath Bhattacharjee in Singur BJP Protest: ‘বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও আহ্বান আসেনি, কী করে জানব!’
BJP Protest in Singur: একুশের বিধানসভা নির্বাচন আবহে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর ভোটেও বেচারামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্বিতা করেন। কিন্তু জয় মেলেনি। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দলের অন্দরেও ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল।
হুগলি: মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গুরে তিনদিনের ধরনা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। এই ধরনা ঘিরে ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। গত রবিবারই মঞ্চ বাঁধতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপির স্থানীয় নেতারা। যদিও ধরনা নিয়ে দল যে এক পা পিছু হঠবে না মঙ্গলবার সে বার্তাই দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু, এই ধরনা মঞ্চে অনুপস্থিত রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ওরফে ‘মাস্টারমশাই’।
কিন্তু কেন এই অনুপস্থিতি? রবীন্দ্রনাথের কথায়, “বিজেপির পক্ষ থেকে কোনওরকম আহ্বান আসেনি। কী করে জানব, কোন কর্মসূচি হচ্ছে? আমার কাছে কোনও খবর আসেনি।” এরপরেই ‘মাস্টারমশাই’-এর তাত্পর্যপূর্ণ উক্তি, “সিঙ্গুর কৃষকদের জমি। সেখানে চাষিদের জন্য কেউ কিছু করলে, যাতে কৃষকদের কল্যাণ সাধিত হয়, সেই রাজনৈতিক দলকে আমার স্বাগত।” যদিও, রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্যের পাল্টা কোনও উত্তর দেননি সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না।
তবে ফিরহাদ বলেছেন, “ধরনা মঞ্চ করে এখন ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে বিজেপি। এতে কোনও লাভ নেই। সিঙ্গুর এভাবে দখল করা যায় না। সিঙ্গুরে তৃণমূল ছিল, তৃণমূলেরই থাকবে। আমাদের মাস্টারমশাইকেও নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। সিঙ্গুরে জয়লাভ করেছে সেই তৃণমূল। এখানে লকেট কেন কাউকে দেখা যাবে না, একা দিলীপ ঘোষ খালি বসে থাকবেন।”
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচন আবহে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর ভোটেও বেচারামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্বিতা করেন। কিন্তু জয় মেলেনি। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দলের অন্দরেও ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকেই কার্যত দলীয় কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বর্ষীয়ান নেতাকে। এদিনের ধরনা মঞ্চ ও কর্মসূচিতেও কার্যত দেখা গেল না রবীন্দ্রনাথকে।
কৃষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে সামনে রেখে তিনদিন ব্যাপী ধরনায় বসছে বিজেপি। তাও আবার জমি আন্দোলনের প্রাণভূমি সিঙ্গুরে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধরনা চলবে।
ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চার ব্যানারে সিঙ্গুরে এই ধরনার ডাক দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এই ধরনা মঞ্চে যাওয়ার কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য নেতা রাহুল সিনহাদের। থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও।
তবে এই কর্মসূচি ঘিরে রবিবার থেকেই জটিলতা শুরু হয়। সেদিন বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা ধরনামঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই সেখানে পৌঁছন সায়ন্তন বসু। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে দাঁড়িয়েই সায়ন্তন হুঁশিয়ারি দেন, সিঙ্গুরে পুলিশ রুখলে কুরুক্ষেত্র হবে। সোমবারও একটি প্রস্তুতি সভায় সায়ন্তন বলেন, পুলিশ এখানে ধরনায় বসতে না দিলে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে গিয়ে বিজেপির কিষাণ মোর্চার সদস্যরা অবস্থান করবেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিজেপির এই কর্মসূচি ঘিরে তৎপরতা রয়েছে হুগলি পুলিশের। সিঙ্গুর থানার পুলিশ, হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলার যাঁরা আধিকারিক রয়েছেন তাঁরা এখানে তৎপর রয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর তাঁরা। পুলিশের পক্ষ থেকে দুর্গাপুর রোড এর পাশে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে, যাতে দুর্গাপুর রোড দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। যদিও সকাল ১০টা অবধি সে অর্থে বিজেপি কর্মীদের ভিড় ধরনাস্থলে দেখা যায়নি। যদিও বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব জানিয়েছে, সকাল ১১টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করতে পারবে।
যে ইস্যুগুলিকে মূলত হাতিয়ার করে বিজেপি ধরনায় বসছে সেগুলি কৃষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কালোবাজারির অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা। এদিনের ধরনা মঞ্চ থেকে বিজেপি সেই অভিযোগ নিয়ে সরব হবে। দ্বিতীয়, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ কিংবা বিমা দেওয়া। সেচের জন্য বিদ্যুতের যে খরচ হয়, তা নিয়েও তিনদিনের কর্মসূচিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে বার্তা দেবে বিজেপি।