তারকেশ্বর: প্রাতঃভ্রমণের সেরে সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছিলেন। বউয়ের হাতের চাও খান। তারপর স্ত্রীকে জানান, রান্না বসাতে, তিনি বন্দুক পরিষ্কার করবেন। স্ত্রী রান্নাঘরেই ছিলেন। আচমকাই একটা শব্দ। স্ত্রী প্রথমটায় বুঝতেই পারেননি। বাইরে এসে দেখেন উঠোনে পড়ে রয়েছে তাঁর স্বামীর দেহ। মাথা এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গিয়েছে। ঘিলু বেরিয়ে এসেছে! ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য। প্রতিবেশীরাও ততক্ষণে কান্না শুনে ছুটে এসেছিলেন। দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত তাঁরা। কাজ হারানোর পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। কিন্তু এমন একটা কাণ্ড যে ঘটিয়ে বসবেন, তা তাঁর স্ত্রীও ভাবেননি কখনও। নিজের বন্দুক দিয়েই মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী যুবক। মর্মান্তিক ঘটনা তারকেশ্বরের মোজপুর গ্রামে। মৃতের নাম শান্তনু ঘোষ (৪৩)।
পরিবার ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যাচ্ছে, শান্তুনু একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের ক্যাশ গাড়ির চালক ছিলেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য একটি বন্দুক কিনেছিলেন তিনি। তাঁর লাইসেন্সও ছিল। কিন্তু লকডাউনের সময়ে তাঁর কাজ চলে যায়। এরপর থেকে আরও কোনও কাজ সেভাবে জোগাড় করতে পারেননি তিনি।
শান্তনুর বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছে আগেই। পরিবারের বেশ কিছু জমি জায়গা ছিল। সেগুলি বিক্রি করেই কোনওভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই জমিও শেষ হয়ে যায়।
আর্থিক সঙ্কটে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, শেষ কয়েকদিনে খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতেন শান্তনু। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করতেন না।
বুধবার সকালে শান্তনু প্রাতঃভ্রমণে বের হন। তারপর বাড়ি ফিরে চা খান। স্ত্রী জানাচ্ছেন, শান্তনু তাঁকে জানিয়েছিলেন বন্দুক পরিষ্কার করে বাজারে যাবেন। তারপরই এই ঘটনা ঘটে। এর থেকে বেশি কিছু বলার পরিস্থিতিতে নেই তাঁর স্ত্রী। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন শান্তনু। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। দোনলা বন্দুকটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।