Hooghly: রাস্তার ধারে ৭৫,০০০ তালগাছ বসিয়েছেন এই শিক্ষক, কারণটা মনে দাগ কাটার মতো
Hooghly: প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে তিনি তাল ছাড়াও বট, অশ্বত্থ, খেজুর, বেল, তেঁতুল, আম বিভিন্ন গাছ বসিয়ে থাকেন। ব্লকের অধিকাংশ এলাকাই কৃষি প্রধান। পাণ্ডুয়ার আত্তি মোড় থেকে রানাগড় যাবার পথে সবুজে ঘেরা প্রচুর গাছ লক্ষ্য করা যায়।

হুগলি: ছোট থেকে সবাই সবাই পড়ে বড় হয়েছে, ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে…’। সেই তাল গাছ বসানোর নেশাই পেয়ে বসেছে হুগলির পাণ্ডুয়ার শিক্ষক ভাস্কর মণ্ডলকে। ইতিমধ্যে ৭৫ হাজার তাল গাছ লাগানো হয়ে গিয়েছে। তালের বীজ ও চারা নিয়ে রাস্তার ধারে বসাচ্ছেন তিনি।
পাণ্ডুয়ায় গাছ বসানোর পর এরপর বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গলেও তালগাছ বসানোর পরিকল্পনা করেছেন ওই শিক্ষক। শুধু তালগাছ নয় সব ধরনের গাছকেই পরিবেশের সবথেকে বড় বন্ধু মনে করেন শিক্ষক। তাই ছাত্রদের নিয়ে সেই বন্ধুদের রক্ষা করেন তিনি। তবে তালগাছ বসানোর একটা বিশেষ কারণ রয়েছে।
কাজের মাঝে যখনই ওই শিক্ষক সময় পান, তখনই ফাঁকা জায়গায় স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে বৃক্ষরোপণ করতে বেরিয়ে পড়েন পাণ্ডুয়ার রানাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর মণ্ডল। তিনি ভূগোলের শিক্ষক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় তাঁর আদিবাড়ি হলেও প্রায় ৩২ বছর আগে হুগলির পাণ্ডুয়ার উত্তরায়ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি ও তাঁর পরিবার। তিনি মনে করেন গাছ হল প্রকৃত “বন্ধু”। তাই বন্ধুকে ত্যাগ করা যাবে না।
গাছ সম্পর্কে ওই শিক্ষক বলেন, “যত বন্ধুত্ব বাড়বে ততই আমরা ভাল থাকবো। তাই আমার কাছে গাছ লাগানো নেশা।” প্রায় ২২ বছর ধরে পান্ডুয়ার বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগিয়ে আসছেন ভাস্কর বাবু। তবে তার মধ্যে অধিকাংশই তালগাছ।
প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে তিনি তাল ছাড়াও বট, অশ্বত্থ, খেজুর, বেল, তেঁতুল, আম বিভিন্ন গাছ বসিয়ে থাকেন। ব্লকের অধিকাংশ এলাকাই কৃষি প্রধান। পাণ্ডুয়ার আত্তি মোড় থেকে রানাগড় যাবার পথে সবুজে ঘেরা প্রচুর গাছ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অধিকাংশই রয়েছে ছোট-বড় তালগাছ। স্থানীয়দের দাবি সেই সমস্ত তালগাছ বসিয়েছেন ভাস্কর বাবু।
তীব্র দাবদহে মানুষ যখন একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য জায়গা খোঁজে, তখনই তাল গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেন অনেক পথচলতি মানুষ। ওই রাস্তার দুপাশেই রয়েছে প্রচুর চাষযোগ্য জমি। কৃষকরাও গাছের ছায়ায় এসে আশ্রয় নেন। প্রায় শতাধিক তালগাছ রয়েছে রাস্তার দুপাশে। তাল গাছের পাশাপাশি তিনি বিহার থেকে মাখনা গাছ এনে জলাশয়ে বসিয়েছিলেন সেই গাছও এখন বড় হয়েছে।
কেন তিনি এই তালগাছ লাগান? সে প্রসঙ্গে ভাস্কর বাবু বলেন, “প্রায় ২২ বছর ধরে তাল গাছ বসাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার গাছ বসিয়েছি। তার মধ্যে অনেক গাছ বড় হয়ে পূর্ণতা পেয়েছে। আর তা থেকেই মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। এই এলাকা যেহেতু অধিকাংশটাই কৃষিপ্রধান এলাকা। তাই এখানকার অন্যতম সমস্যা হল, মাঠে কাজ করার সময় অনেকের বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে তালগাছ যদি মাঠের মাঝখানে বা আশপাশে থাকে, তাহলে বজ্রপাত থেকে মানুষ রক্ষা পায়। যাতে কারও মৃত্যু না ঘটে, সেই কারণেই আমার এই তালগাছ লাগানো।” এরপর বাঁকুড়াতেও গাছ বসাবেন তিনি।
প্রধান শিক্ষককে সাহায্য করে তাঁর স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে “নেচারস লাভার ক্লাব” নামে একটি সংগঠন করেছেন ভাস্কর বাবু। গ্রামে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাল আঁটি সংগ্রহ করার জন্য পিকআপ সেন্টার তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। কেউ ফোন করে জানালেই তাঁর বাড়িতে হাজির হয়ে যান শিক্ষকসহ পড়ুয়ারা। সেখান থেকে তাঁরা তাল আঁটি সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় বসান।





