হুগলি: একুশের নির্বাচনের পর থেকেই নিজের পুরনো ঘরে ফিরতে ‘উৎসাহ’ প্রকাশ করেছেন অধুনা বিজেপি নেতা প্রবীর ঘোষাল। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগোবাংলা’-য় একের পর এক কলাম লিখেছেন প্রবীর। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্দিরার সমতুল্য বলার পাশাপাশি বিজেপিকে একটি ‘অর্থসর্বস্ব’ দল বলতেও পিছপা হননি তিনি। এ বার সরাসরি প্রবীর ঘোষালকেই (Prabir Ghosal) নিশানা করলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।
কোন্নগড়ের বইমেলার অনুষ্ঠানে বেশ কিছুদিন আগেই প্রবীর ঘোষালের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। অন্য আরেকদিন দেখা গিয়েছিল উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককেও। সেদিন প্রবীর ও কাঞ্চনকে একই মঞ্চে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছিল। আর তা নিয়েই এ দিন কটাক্ষ হানেন কল্যাণ। নাম না করে স্পষ্টই বলেন, “আমি স্পষ্ট কথা বলি। কোনও নাটক করি না। ভাগ্যিস গত সপ্তাহে আসিনি। তাহলে বেইমানদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতে হত। আমি বেইমানদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতে পারব না। আমি নাটক করি না। কার ভাল লাগল, কার ভাল লাগল না, তাতে কিছু যায় আসে না। রাজনীতি একটা সিরিয়াস জায়গা।”
এরপর নাম না করে তৃণমূলের বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককেও নিশানা করেন কল্যাণ। বলেন, “দল একটা মানসিকতা, ভরসা করে চলে। রাজনীতির সঙ্গে অন্য কিছু গুলোবেন না। নাটক করুন, সিনেমা করুন, সার্কাস করুন। এভাবে রাজনীতি করতে আসবেন না।”
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে, কোন্নগড়ে বইমেলার অনুষ্ঠানে কামারহাটির বিধায়কের পাশেই দেখা গিয়েছিল প্রবীরকে। পরে আরেকদিন, ওই বইমেলাতই কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। যা নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায় দলেরই অন্দরে। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন প্রবীরের ঘরওয়াপসি এ বার কেবল সময়ের অপেক্ষা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সাংসদের এমন মন্তব্য যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে প্রাক্তনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে চাটার্ড বিমানে দিল্লী উড়ে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তারপর সেখানে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরেই পদ্মপতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এখনও সেই দলেরই সদস্য। অথচ, সেই দলের বিরুদ্ধেই বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন প্রবীর।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তরপাড়ায়। কিন্তু প্রবীর ঘোষাল পরাজিত হন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে যেভাবে জলঘোলা শুরু হয়েছিল, ঠিক সে সময় প্রবীর ঘোষালকে নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। ত্রিপুরায় অভিষেকের হাত ধরে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে রাজীবের। প্রবীর ঘোষালের রাজনৈতিক অবস্থান এখনও ধোঁয়াশায়। তবে জাগো বাংলায় যেভাবে তিনি তাঁর বর্তমান দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, তাতে ধন্দে রাজনৈতিক মহল।
যদিও, এর আগে জাগো বাংলায় কলম ধরার পর, প্রবীর ঘোষাল TV9 বাংলাকে জানিয়েছিলেন, তিনি এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাল ঢোল পিটিয়ে তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন না। বিজেপিতে গিয়ে তিনি কী কী অনুধাবন করেছিলেন, তাঁর একটি খসড়া তুলে ধরেছেন। এখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। প্রবীর ঘোষাল ইঙ্গিত, দিয়েছেন, আপাতত রাজনীতির থেকে দূরে থেকে লেখালেখিতেই নজর দেবেন।
আরও পড়ুন: Army Helicopter Crash: কপ্টার দুর্ঘটনার ৪ দিন পর কফিনবন্দি হয়ে ঘরে ফিরছেন সতপল রাই