হাওড়া: আগে বিচার, পরে চাকরি। ‘সরকার’-এর চাকরির প্রস্তাবে সাফ জবাব ছাত্রনেতা আনিস খানের বাবা সালেম খানের। ছেলের খুনের বিচার চাই। দোষীদের যোগ্য শাস্তি চাই। তারপর চাকরির কথা ভাববেন। স্পষ্ট করলেন ছাত্রনেতার বাবা। আনিস খানের বাবার কথায়, “দিদি একটা চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দিদিকে এই কথাটাই বলব, চাকরি তোলা রইল আমার মাথার ওপর। কিন্তু আমার ছেলের খুনের বিচার আপনি যখন করে দেবেন, দোষীদের শাস্তি দেবেন, সেই দিন আপনার চাকরিটা নেব।” আনিসের বাড়িতে সোমবার সকালে তদন্তকারী আধিকারিকরা যান। ছাত্রনেতার বাড়িতে ডিএসপি সুব্রত ভৌমিক। ছাত্রনেতা আনিসের বাড়িতে ডিএসপি-র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যায়।
রবিবার রাতে আনিস খানের বাড়িতে এসেছিল একটি প্রতিনিধি দল। সেই প্রতিনিধি দলের এক সদস্য আনিসের বাবাকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পাঠিয়েছেন। আনিসের পরিবারকে মুখ্য়মন্ত্রী চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান। আনিসের দাদা কিংবা পরিবারের কোনও এক সদস্যকে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাতেই আনিসের বাবা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সেই চাকরির কথা মাথায় রাখছেন। কিন্তু আগে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার সকাল থেকেই দেখা যায়, আনিসের বাড়ির সামনে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। প্রতিনিধি দলের সামনেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন আনিসের বোন। আনিসের বোন জানান, বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই নানারকম হুমকির শিকার হচ্ছিলেন আনিস। পুলিশি নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। এই নিয়ে একাধিকবার পুলিশের কাছে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেভাবে পুলিশের তরফ থেকে বিষয়টিতে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। রবিবার রাত একটার পর থেকে সশস্ত্র পুলিশ আনিসের বাড়ির সামনে মোতায়েন রয়েছে।
আনিসের দাদার বক্তব্য, তাঁরা তো নিরাপত্তা চাইছেন না, নিরাপত্তা চেয়েছিলেন তাঁর ভাই। আনিস যখন হামলা-হুমকির মুখে পড়েছিলেন, তখন কেন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি? প্রশ্ন তোলেন আনিসের দাদা। শুক্রবার রাতে সিভিক ভল্টেটিয়ারের বেশে যে চার জন তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বার করার দাবি জানিয়েছে পরিবার। এখনও অধরা ওই চার অভিযুক্ত।
আজ হঠাৎ কেন পুলিশের তরফ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আনিসের দাদা বলেন. “আমার ভাগ্নি আগেই বলেছিল, আনিস আগে থেকেই নিরাপত্তা চেয়েছিল। ও কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। এসডিও অফিসে চিঠি দিয়েছিল, পুলিশকে জানিয়েছিল। কোনও নিরাপত্তা দেয়নি। কাল একজন প্রতিনিধি দল, সেই দলেরই একজন পুলিশ সুপারকে ফোন করে বললেন ফোর্স পাঠাও। তারপর দেখি পুলিশ। আমাদের ওপর কি গ্রামের লোক অত্যাচার করছে? আমাদের কিসের নিরাপত্তার দরকার?”
আনিসের মৃত্যুতে তপ্ত বাংলা। ফিরেছে রিজওয়ানুরের স্মৃতি। পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছে পরিবার। পথেও জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন। প্রতিবাদে সামিল বিদ্বজনেরাও। বিচারের দাবি সব মহলে। আদৌ কি বিচার পাবে আনিস? তাকিয়ে রয়েছে বাংলা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে আমতার সারদা দক্ষিণ খাঁ পাড়ায় বছর আঠাশের আনিস খানকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে খুন করার অভিযোগ ওঠে। আনিসের পরিবারের লোকজন দাবি করেন, আমতা থানার একজন পুলিশ আধিকারিক এবং তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার এই ঘটনায় যুক্ত।
আরও পড়ুন: Bhabanipur Murder: আততায়ী কি ওড়িশায় লুকিয়ে? ভবানীপুর খুনে অভিযুক্তকে ধরে দিতে পারলেই পুরস্কার