হাওড়া: আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে ফের সিটের তদন্তকারীরা। সিলমোহর ছাড়াই নোটিস দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার নির্দেশ সিট-কর্তার। কিন্তু কেই সই নেই নোটিসে? প্রশ্ন তুলে এই সিটের নোটিস গ্রহণ করল না আনিসের পরিবার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা-আটটা নাগাদ সিটের তদন্তকারীরা আনিসের বাড়িতে যান। আগামী বুধবার যাতে আনিসের পরিবার ১৬৪- অর্থাৎ আদালতের কাছে জবানবন্দি দেয়, তার অনুমতি নিতে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু আইনজীবীর পরামর্শে কাগজে সই করতে চাননি আনিসের বাবা। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সেখানেই অপেক্ষা করেন সিটের আধিকারিকরা। পরে মহিলা তদন্তকারী ছাড়াই তাঁরা আনিসের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আনিসের বাবা ও পরিবারের অনান্য সদস্যরা। সিটের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
মূলত পরিবারের মোট ৭ জনের জবানবন্দি জন্য আবেদন করে আনিসের বাবার কাছে। প্রথমে আনিসের পরিবার রাজি হয়নি। আনিসের পরিবারের আইনজীবী জানান, সাদা কাগজে সিলমোহর ছাড়া লিখিত নোটিস দেওয়া হয়েছে। সিলমোহর ছাড়া নোটিসে যাবেন না আনিসের পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার আইনজীবী আনিসের বাড়ি গিয়ে কথা বলবেন।
আনিসের আইনজীবী বলেন, “সিটের তদন্তকারীদের সঙ্গে আমার একাধিকবার কথা হয়েছে। আমি আশ্বস্ত করেছি খানের পরিবার এই তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। কিন্তু সেটা আইন মেনেই হবে। আমি শুনলাম সিটের কোনও অফিসার গিয়ে আনিসের বাবাকে বলেছেন, আপনাকে যেতে হবে, নোটিস দিয়েছেন, সেটা কাগজের নোটিস। সই নেই, সিলমোহর ছাড়া দিয়েছেন। যে কোনও সিলমোহর ছাড়া নোটিস কি গৃহীত হবে? তাই আমি বলেছি, ,সিলমোহর ছাড়া কোনও নোটিসে ১৬৪ কীভাবে হবে?”
মার্চের শেষেই একজন ফটোগ্রাফার সহ জন অফিসার যান আনিস খানের বাড়িতে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন জায়গায় মাপজোক করেছিলেন তাঁরা। কীভাবে আনিস খানের দেহ সেখান থেকে পড়েছিল, সেই সব বিষয়গুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন সিটের অফিসাররা। আনিসের বাবা সালেম খানের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্তকারী অফিসাররা। জানা গিয়েছে, সিটের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আনিসের বাবা। আনিসের বাবার বক্তব্য, “কয়লা কেলেঙ্কারিতে ইডি ডেকে পাঠিয়েছে, সেই জ্ঞানবন্ত সিং সিটের তদন্তে আছেন। সেই জ্ঞানবন্ত সিংকে আমি কীভাবে ভরসা করব? এই জন্য আমার সিটের উপর ভরসা নেই। আমার সিবিআই তদন্তই দরকার।”
উল্লেখ্য, ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুতেও মুখ পুড়েছিল রাজ্যের পুলিশি ব্যবস্থার। অভিযোগ উঠেছে, যারা সেদিন আনিসকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলেছিল, তাদের পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। যদিও ওই দিন পুলিশের পোশাক পরে কারা এসেছিল, তা নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। এদিকে আনিস খানের ময়না তদন্তের দ্বিতীয় রিপোর্ট ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আনিসের মাথায় গভীর ক্ষত রয়েছে। শরীরে বেশ কিছু হাড় ভাঙা ছিল। মাথার খুলির পিছন দিক থেকে ডান কানের উপর পর্যন্ত গভীর ক্ষত রয়েছে। ডান দিকের কপালে ক্ষত রয়েছে। শুধু তাই নয়, খুলির বাঁ দিকের হাড় ভেঙে গিয়ে ঘিলু বেরিয়ে এসেছিল। এমনই আরও বেশ কিছু জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।