Belgachia: ‘দুটো রুটি কার মুখে দেব, মরলে এখানেই মরব…’, প্রতি ঘণ্টায় ভেঙে পড়ছে একের পর এক বাড়ি, বেলগাছিয়ায় অস্তিত্ব সঙ্কটে কয়েক হাজার গরিব মানুষ
Belgachia: কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝাঁঝালো মিথেন গ্যাসের গন্ধ। এলাকায় ঢুকলে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বুক ফাঁটা কান্না। মাথার ওপর ছাদটুকু তাঁদের নেই। আপনজনরা ছিন্নভিন্ন, খোলা আকাশের নীচে রাত কাটছে তাঁদের। চরম অনিশ্চয়তা, কখন গোটা বাড়িটাই ঢুকে যায় মাটির নীচে।

হাওড়া: ধস কেড়েছে মাথার ছাদ। ভাগাড়ের ধসে বিপন্ন বহু মানুষ। প্রায় বিলিন হয়ে যেতে বসেছে বেলগাছিয়া। ধস অব্যহত হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে। আর আরও গহীন হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক। ধসের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাগাড়ের ঠিক পিছনে ঝিলের ধারের ১৫ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে ১০ ফুট উঁচুতে উঠে গিয়েছে। কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝাঁঝালো মিথেন গ্যাসের গন্ধ। এলাকায় ঢুকলে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বুক ফাঁটা কান্না। মাথার ওপর ছাদটুকু তাঁদের নেই। আপনজনরা ছিন্নভিন্ন, খোলা আকাশের নীচে রাত কাটছে তাঁদের। চরম অনিশ্চয়তা, কখন গোটা বাড়িটাই ঢুকে যায় মাটির নীচে।
ঘটনার পর তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই বিপর্যস্ত এলাকা থেকে বিপন্ন সকলকে সরানোই হয়নি। বুক ফাঁকা কান্না এলাকাবাসীর। বিপন্ন এক মহিলা বলেন, “আমাদের পুরো বাড়িটাই পড়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে। প্রশাসনের লোক আসছে দেখে চলে যাচ্ছে। কিচ্ছু বলছে না। মরলে এখানেই মরব। এখানেই চাপা পড়ে মরব। এখান থেকে কোথাও যাব না।”
আরেক মহিলা বলেন, “বাড়ি একেবারে চুরমার হয়ে গিয়েছে। বাচ্চাগুলোও যে এখানে। বুকে আঁকড়ে রাতে ঘুমোই। যে কোনও সময়েই চাপা পড়ে মরে যেতে পারি। দুটো রুটি, সেটা ওর মুখে দেব নাকি নিজের মুখে… বুঝি না! প্রশাসন এসে শুধু সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে।”
তিন দিন হয়ে গিয়েছে, এখনও কি সমস্যা কিছু বদলেছে? প্রশ্ন করতেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন এক সত্তরোর্ধ্ব মহিলা। বললেন, “আমার চার নাতি-পুতি, ওদেরকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমি আমার শেষ সম্বল আঁকড়ে পড়ে, ওদের মুখটাও দেখতে পারছি না। শেষ হলে এখানেই হব।”
ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ভবিষ্যৎ কী? সেই উত্তর খুঁজতে রবিবার এলাকায় যাচ্ছে ভূবিজ্ঞানী দল। এলাকা পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও নির্মাণ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, “আমাদের ডাম্পিং গ্রাউন্ডের যে হাইট, দৈর্ঘ্য-প্রস্থের তুলনায়, তারও একটি লিমিটেশন রয়েছে। সেটা কখনও আনলিমিটেড হয় না। কারণ মাটির ভার বহন ক্ষমতার একটা সীমা রয়েছে। সেই সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে যদি বাড়ি নির্মাণ হয়, তাহলেও বিপদ, ডাম্পিং গ্রাউন্ড হলেও বিপদ।” এই পরিস্থিতির জন্য খানিকটা অভিযোগের সুরেই তিনি বলেন, “প্রশাসন আসলে মনে করে সব কিছুই আনলিমিটেড, ব্রিজের মতো, ডাম্পিং গ্রাউন্ডেরও ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। সেটা পেরিয়ে গেলে এই ধরনের ঘটনা ঘটবেই। পুরপ্রশাসনের যদি নজরদারি না থাকে, তাহলে মানুষকে এই ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হবেই। ”
শুক্রবারই মন্ত্রী অরূপ রায় আশ্বস্ত করেন, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সরকার এই সমস্ত পরিবারের পাশে রয়েছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু এত ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও যে কে সেই অবস্থা!
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “একটা বাঁধন থাকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। র্যাক পিকার্সরা কিছু মেটেরিয়াল তোলার জন্য মাটি খোড়ে। খুড়তে খুড়তে আলদা হয়ে গিয়েছে। তাতেই ধস। তাতেই বড় ভাইব্রেশন হয়েছে। আমাদের ওখানে একটা পাইপ লাইন ছিল, সেটাও ফেটে যায়। যেহেতু রোজার সময়ে রেগুলার জল দেওয়া হচ্ছে। কেএমডিএ এই কাজটা হাতে নিয়েছে।”





