হাওড়া: উত্সবে মেতেছে রাজ্য। শিয়রে চোখ রাঙাচ্ছে করোনায় (COVID19)। কোভিড বিধি মেনেই এ বার বেলুড় মঠে (Belur Math) পালিত হচ্ছে পুজো। সপ্তমীর ভোরে পৌনে পাঁচটা নাগাদ নবপত্রিকা স্নানের মধ্যে দিয়ে শুরু পুজো। নিয়ম মেনেই কলাবউয়ের মাথায় ছাতা ধরে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে গেলেন মহারাজেরা। সারা হল উপাচার। তবে করোনার জন্য সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্য়মকেও।
সপ্তমীর ভোরে দেখা যায়, বেলুড মঠের নিজস্ব গঙ্গাঘাটেই কলাবউয়ের মাথায় ছাতা ধরে নিয়ে যান মহারাজেরা। সেখানে, গঙ্গায় স্নান করানোর পর নতুন কাপড়ে মুড়ে নিয়ে আসা হয় কলাবউকে। চলে পুজো। কথিত রয়েছে, শ্রীরামকৃষ্ণ দেবীকে মেয়ে রূপেই পুজো করতেন। সেই বিধি মেনেই কলাগাছকেও গণেশের বধূ মেনে স্নান করানো হয়। সেই স্নান করানোর আচার পালন করেন খোদ মঠের মহারাজেরাই। এবছরও তার অত্যুক্তি হয়নি।
পুজোর আগেই মঠ কর্তৃপক্ষ জানান, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতেই গত বছরের মতো এ বছরেও দুর্গাপুজোয় ৯ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর অর্থাত্ চতুর্থী থেকে একাদশী পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মঠ। দুর্গাপুজো ও কুমারীপুজো দেখতে চোখ রাখতে হবে বেলুড় মঠের ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব চ্যানেলে। সেখানেই দিনভর চলবে লাইভ সম্প্রচার। প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সংবাদমাধ্য়মের ক্ষেত্রেও। ৬ অক্টোবর মহালয়ার দিনও বন্ধ ছিল মঠ। আগামী ১০ নভেম্বর ছটপুজোর দিনেও মঠ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঠ সূত্রের খবর, করোনার তৃতীয় ঢেউয় আসন্ন। স্বভাবতই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং দেশের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জারি করা কোভিড বিধি মেনেই তাই মঠ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বারেও গত বছরের মতোই মূল মন্দিরেই পুজো হবে। দূরত্ব বিধি মেনে সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারীরাই পুজোর আয়োজনে থাকছেন। কুমারী পুজো হবে মূল মন্দিরের পশ্চিমের বারান্দায়। পুজোয় যুক্ত সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারীদের মতো কুমারীর পরিজনদেরও কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট কিংবা কোভিড টিকার দুটি ডোজের শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অগস্ট তৃতীয়বারের জন্য খোলা হয় বেলুড় মঠ। যথাযথ স্বাস্থ্য ও কোভিড বিধি মেনে প্রত্যেক দর্শনার্থীদের মঠে প্রবেশের অনুমতি মেলে। মঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, প্রত্যেককে কোভিড ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ় নেওয়ার শংসাপত্র দেখাতে হবে। অথবা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে।
আগের বছর কোভিডের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করলে ২৫ মার্চ ২০২০ প্রথম বন্ধ করা হয় বেলুড় মঠ। এরপর ১৫ জুন ২০২০ থেকে খোলা ছিল মঠ। কিন্তু ফের সংক্রমণের বাড়াবাড়িতে গত বছর ১ আগস্ট তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বন্ধই ছিল মঠ। আবারও বেলুড় মঠ খোলা হয় ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে এ বছর ২২ এপ্রিল ফের বন্ধ করা হয় মঠ।
গুরু পূর্ণিমার দিন একদিনের জন্য ২৪ জুলাই বেলুড় মঠ খোলা হলেও, তা ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফের গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে বৈদিক মন্ত্র, স্তোত্র পাঠ, ভজন, সারদা মা ও রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের বাণী পাঠ করা হয়। তবে সবটাই ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়। গুরুপূর্ণিমায় দু দফায় খোলা থাকে মঠ। কিন্তু পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মঠ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনেই মঠ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভক্তদের মঠে প্রবেশ করতে হলে দুটি শর্ত মানতে হবে। কোভিডের দুটি ডোজ় নিতে হবে অথবা ৭২ ঘণ্টা আগে করা কোভিড রিপোর্ট সঙ্গে করে আনতে হবে। মঠে অনেক বয়স্ক মানুষ আসেন, তাছাড়া বয়স্ত সন্ন্যাসী, মহারাজদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন: Electrocution: জমিতেই ছিল ১১ হাজার ভোল্টের ‘মৃত্যুফাঁদ’, অজান্তে পা দিতেই মৃত্যু চাষির!