এক্সক্লুসিভ: মমতার ছবি এখনও তাঁর অফিসেই রয়েছে, নিজের এলাকাতেই পদযাত্রায় বললেন রাজীব
এই প্রসঙ্গ উঠলে রাজীব বলেন, "আমি নিজে থেকে কখনই নেত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিনি। তিনি আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, তাই আমি পাল্টা বলেছি।"
সেই এলাকা। সেই মানুষ। সেই নেতা। শুধু বদলেছে রং। এক সপ্তাহ হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক পরিচিতি বদলেছে। দলবদলের পর এই প্রথম নিজের এলাকায় হাঁটলেন রাজীব। তাঁকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাজীব তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। বয়স্ক মহিলার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন। তাঁদের বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। মানুষ তাঁর মাথায় হাত রেখে আর্শীবাদও করেছেন। গোটাটাই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। এলাকার মহিলারা বললেন, “আপনি আমাদের দেখবেন দাদা, আমরাও দেখব।”
তবে সকালের ছবিটা কিছুটা হলেও ছিল অন্যরকম। এলাকাতে ঢুকতেই তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তবে তাকে খুব বেশি আমল দেননি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা প্রশ্নটা রেখেছিলাম তাঁর কাছে। রাজীব বললেন, “এটাই যদি ওঁদের মনে হয় রাজনৈতিক সৌজন্য, আমার কিছু বলার নেই। যাঁরা করছেন, হতাশা থেকে করছেন।”
কথাগুলো বলতে বলতেই এগিয়ে চলছেন রাজীব। দু’পাশের অসংখ্য মানুষ তখন চেঁচিয়ে বলছেন ‘রাজীবদা রাজীবদা…’ হাত নাড়িয়ে নেতা তাঁদের বলছেন, ‘ভাল আছেন তো?’ ছবিটায় যেন ধরা পড়ছে, সেই পুরনো মানুষটার প্রতিই এলাকাবাসীর আন্তরিকতা, ভরসা। আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ‘নতুন দলে যোগ দিয়ে আপনি কী আশা করছেন?’ রাজীবের উত্তর, ‘নতুন দলে যে সম্মান দিয়েছে, কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করছে, এটা আমার কাছে বিরল সম্মান। আমি তার যোগ্য মর্যাদা দেব। আমি আগেও বলেছি, মন্ত্রী-বিধায়ক হয়ে আমি জন্মাইনি, মন্ত্রী-বিধায়ক হয়ে মরবও না।”
কথার মাঝেই চলে আসে প্রার্থী প্রসঙ্গ। ডোমজুড় থেকে কি প্রার্থী হচ্ছেন তিনি? প্রশ্নটা শেষ করার আগেই রাজীবের স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর, “কোনও প্রশ্নই আসেনি না। দেখছেনই তো মানুষের আবেগ। আর কী কিছু বলার থাকে। আগে ডোমজুড় পরে সব কিছু।”
চলে আসে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে চর্চিত বনদফতরে দুর্নীতি ইস্যু। রাজীব বলেন, “আমি তো স্বাগত জানিয়েছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তদন্তপ্রক্রিয়াকে কেউ যেন প্রভাবিত করতে না পারে। এতদিন মন্ত্রী ছিলাম, তদন্ত হল না। যেই বেরিয়ে এলাম দুর্নীতি প্রসঙ্গ উঠছে।”
বন দফতরে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি ইস্যুতে তাঁর মোবাইলে আসা এক রহস্যময় ব্যক্তির এসএমএস প্রসঙ্গে বলেন, “আমি যা বলার আগেই বলেছি। সময় এলে নতুন কিছু বলার হলে বলব। আমার যখন যেরকম ভাবে প্রয়োজন হবে বলব। আমি কাউকে নিজে থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করি না। কাউকে খোঁচা দিই না। কেউ আমাকে আক্রমণ করলে বলব। তবে আমি বলব, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কীভাবে হয়েছিল, তারও তদন্ত হোক।”
রাজীব বললেন, “আমি চাই কেন্দ্রের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে। মানুষের জন্য কাজ করতে।” তবে একুশের আবারও যদি তৃণমূল ক্ষমতায় আসে তখন কী করবেন? প্রশ্নের উত্তরে রাজীব বলেন, “এলে আসবে। কিচ্ছু করার নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সরকার ক্ষমতায় আসে। তাকে স্বাগত জানাব। তাতে যদি আমাকে বিরোধী দলে বসতে হয় বসব।”
রাজীব যেদিন মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন, সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বুকে আঁকড়ে কেঁদেছিলেন, তারপরই আবার সুর চড়িয়েছেন প্রাক্তন নেত্রীর বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গ উঠলে রাজীব বলেন, “আমি নিজে থেকে কখনই নেত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিনি। তিনি আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, তাই আমি পাল্টা বলেছি।”
আরও পড়ুন: মোদীর সভার আগে নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মীদের উপর ‘হামলা’, নন্দকুমারে ছিঁড়ল ফ্লেক্স
নেত্রীর ছবি এখনও তাঁর অফিসেই রয়েছে বলে জানান রাজীব। তবে কি তিনি দু’পথই খোলা রাখছেন? উত্তরে রাজীব বললেন, “আমি ইশ্বরে বিশ্বাসী, কর্মে বিশ্বাসী, মানুষে বিশ্বাসী। আমি জানি আমার ভবিষ্যৎ কী? এখানে পরিবর্তন হবেই হবে। মানুষের কল্যাণ হবে।”