হাওড়া: বাড়িতে একাই থাকতেন বৃদ্ধ। এলাকাবাসীর কথায়, আত্মীয়-পরিজন সে অর্থে কেউই কোনওদিন দেখা করতে আসেননি। বৃদ্ধ বলতেন, তাঁর কেউ নেই! একে তো বয়সের ভার, তার উপর একাকিত্ব থেকে মানসিক অবসাদ! দিন দুই বাড়ির বাইরে তাঁকে দেখতে পাননি প্রতিবেশীরা। এরপর বৃহস্পতিবার ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় বৃদ্ধের নিথর দেহ। বৃহস্পতিবার হাওড়ার শিবপুর থেকে উদ্ধার করা হয় রামেন্দুশেখর শেঠ (৭৫) নামে ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ। পুলিশের অনুমান, দিন দুই আগেই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ রামেন্দুশেখর শেঠের পরিচিত একজন বাড়িতে যান। অনেকক্ষণ ধরেই ডাকাডাকি করছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না ভিতর থেকে। এরপরই চিৎকার করতে থাকেন তিনি। আশেপাশের বাড়ির লোকেরা চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসেন। ক্রমে ভিড় বাড়তে থাকে। খবর দেওয়া হয় শিবপুর থানায়।
প্রতিবেশীদের কথায়, দিন দুই ধরে শেঠব বাড়ির জানলা, দরজা বন্ধ ছিল। কোনও সাড়া শব্দও পাননি তাঁরা। কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল তাঁদের। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার রামেন্দুশেখর শেঠের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এদিন পুলিশ এসে দরজা ভেঙে শিবপুরের ৬০/১ গোপাল ব্যানার্জি লেনের ওই দোতলা বাড়ির একতলার ঘর থেকে বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে। এলাকার লোকজন জানান, দেহটি একতলার ঘরের খাটে শোওয়া অবস্থায় ছিল। ডানদিকে পাশ ফিরে শোওয়া ছিলেন বৃদ্ধ। খালি গা, পরণে ছিল শুধু একটা ধুতি। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন রামেন্দুশেখর শেঠ। তাঁর পরিবারে কেউ নেই। আত্মীয়ও পরিজনও কাউকেই কোনওদিন দেখেননি এলাকার লোকজন। এদিন সকালে ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় যান স্থানীয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। তিনি জানান, রামেন্দুবাবু প্রচুর পাখি ভালবাসতেন। বাড়িতে খাঁচায় প্রচুর পাখিও পুষেছিলেন। ঘরে পাখিগুলি এদিন শুধুই ছটফট করেছে! বৃদ্ধের দেহ উদ্ধারের পর পুলিশকে বলে পাখিগুলি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এলাকার লোকজন জানান, পশুপাখি ভালবাসতেন ওই বৃদ্ধ। নিজেই রান্নাবান্না করে খেতেন। তবে সম্প্রতি ভাতটুকু ফুটিয়ে খাওয়াও তাঁর জন্য কঠিন হয়ে উঠছিল। প্রতিবেশীরাই তাঁকে খাবার পাঠাতেন। এই ঘটনার পর হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, বারবার শিবপুরের মত এলাকায় কেন একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এভাবে সকলের অলক্ষ্যে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া বা চিকিৎসা না পেয়ে অবহেলায় মারা যাচ্ছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে এই ধরনের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে মানবিক পুলিশ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: মমতার বিমানে কী হয়েছিল সেদিন, প্রকৃত তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের