হাওড়া: চ্যাটার্জিহাটে দম্পতির মৃত্যুর তদন্তে নেমে কিছুটা খুলল জট। শুধুমাত্র ফেসবুকে আশক্তি নয়, স্ত্রীয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক একাধিক বিষয়ে লেগে থাকত অশান্তি। আসলে উচ্চাকাঙ্খী স্ত্রীর পছন্দ ছিল না স্বামীর পানশালার চাকরি। যার কারণে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা বাঁধত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। অন্তত এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়া স্টেশন লাগোয়া সাবের ধারে একটি পানশালায় চাকরি করতেন স্বামী গৌতম মাইতি। কিন্তু স্বামীর এই পানশালার চাকরি মোটেই পছন্দ করতেন না স্ত্রী। সেই কারণে একাধিকবার গৌতমবাবুকে সেই চাকরি ছেড়েও দিতে বলেছিলেন । কিন্তু স্বামী চাকরি না ছাড়ায় নিত্যদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগে থাকত।
স্ত্রী মনে করতেন, তাঁর স্বামী অন্য জায়গায় চাকরির চেষ্টা না করে সারাদিন বাড়িতে বসে থাকেন। পানশালার কাজটাও সঠিক নয়। এই নিয়েই দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য চলত। অপরদিকে স্ত্রীর বাড়িতে বসে মোবাইল ঘাঁটাও পছন্দ করতেন না স্বামী। তা নিয়েও প্রতিদিন হত অশান্তি। আর এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতেই স্ত্রী মৌসুমিকে প্রথমে খুন করে তার পর আত্মঘাতী হন স্বামী গৌতম । চ্যাটার্জিহাটে মাইতি দম্পতির দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পারল চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত গৌতম ও মৌসুমি মাইতির দুই মেয়ে মৌরুসি ও আরুশিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাবা ও মা কে হারিয়ে দু’জনেরই মানসিক অবস্থা বর্তমানে খুব খারাপ। মানসিকভাবে একটু স্থিতিশীল হলে তাঁদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা। তবে সাংসারিক অশান্তি থেকেই যে এমন ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত পুলিশ।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক অশান্তি থেকেই দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রসঙ্গত, রবিবার মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে শিবপুরের চ্যাটার্জিহাটের নন্দলাল মুখার্জি লেনে। ১২/২ নন্দলাল মুখার্জি লেনের তিন তলা ফ্ল্যাটের একতলার ঘর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় গৌতম মাইতি (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমী মাইতি (৩৪)-এর দেহ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, প্রথমে স্ত্রীকে গলায় তার জড়িয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে তার পর নিজে গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন গৌতম।
হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন একটি বারের ম্যানেজার ছিলেন গৌতম। বছর তিনেক আগে তারা চ্যাটার্জিহাটে ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া আসেন। তার আগে দাসনগরের দিকেই থাকতেন তাঁরা। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী আরুসী দাসনগরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে। বড় মেয়ে মৌরুশিও ওখানেই পড়াশোনা করে। বাবা মায়ের একসঙ্গে মৃত্যু দেখে দু’জনেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা দুজনেই এখন নিকটস্থ আত্মীয়র কাছেই রয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্ত্রীয়ের ফেসবুক আসক্তির জেরে রাতভর অশান্তি! রবিবাসরীয় দুপুরে উদ্ধার দম্পতির মৃতদেহ