গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বিজেপি, বহিষ্কৃত ৩, শোকজ ১৪ নেতাকে

ঋদ্ধীশ দত্ত |

Jan 24, 2021 | 11:56 PM

জেলা বিজেপি সভাপতি সন্দীপ নন্দী-সহ ১৪ জনকে শোকজ করা হল। অন্যদিকে দলবিরোধী কাজের জন্য কোচবিহারের তিন কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বিজেপি, বহিষ্কৃত ৩, শোকজ ১৪ নেতাকে
প্রতীকী চিত্র।

Follow Us

পূর্ব বর্ধমান ও কোচবিহার: দিনকয়েক আগের পূর্ব বর্ধমানে আদি ও নব্যের কোন্দলে দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত ভাঙচুর হয়েছিল। সেই ঘটনায় এবার জেলা বিজেপি সভাপতি সন্দীপ নন্দী-সহ ১৪ জনকে শোকজ করা হল। অন্যদিকে দলবিরোধী কাজের জন্য কোচবিহারের তিন কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি। উল্লেখ্য, মাসখানেক আগে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য সায়ন্তন বসু-সহ রাজ্য বিজেপির একাধিক প্রথম সারির নেতাকেও শোকজ করা হয়েছিল।

পূর্ব বর্ধমানের নেতাদের শনিবার বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় শোকজের চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে দলের সংবিধানের ২৫ এ এবং ২৫সি ধারায় শোকজ করার কথা জানানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নির্দেশেই যে শোকজ করা হয়েছে তা জানানো হয়েছে চিঠিতে। শোকজের চিঠি প্রাপ্তির কথা জেলা সভাপতি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। তবে, শুনেছি শোকজ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলব না।”

অন্যদিকে দলবিরোধী কাজের জন্য তুফানগঞ্জের মণ্ডল কমিটির সদস্য ও বুথ সভাপতি জয়ন্ত মজুমদার, ওয়ার্ড কমিটির সদস্য লক্ষ্মণ কর্মকার ও সঞ্জয় কর্মকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী বিবাদে উস্কানি দেওয়া ও দলের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। বাতিল করা হয়েছে তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদ। বহিষ্কৃত নেতারা যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা জানিয়েছেন, দলের একাংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই তাঁদের সরানো হল।

বেশ কিছুদিন ধরে বর্ধমান জেলায় বিজেপির অন্দরে নব্য ও আদিদের বিরোধ দেখা দিয়েছে। দলে পুরনোদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। জেলা সভাপতি বিভিন্ন মণ্ডলে নিজের পছন্দের লোকজনকে সভাপতি ও অন্যান্য পদে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ।

কিছুদিন আগে বর্ধমান শহরের নীলপুরে বিজেপির পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের লোকজন। বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হন। সেই সময় দলের তরফে পার্টি অফিস ভাঙা নিয়ে তেমন কোনও আন্দোলন হয়নি। দলের ক্ষমতাসীনরা ঘর ছাড়া কর্মীদের পাশে সেভাবে দাঁড়ায়নি বলে নীচুতলার কর্মীদের অভিযোগ। ঘর ছাড়াদের পার্টি অফিসে আশ্রয়ও দেওয়া হয়নি। রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কয়েকজনের বোঝাপড়া রয়েছে বলে নীচুতলার কর্মীরা সোচ্চার হয়েছেন। শহরের এক চিকিৎসক ভুঁইফোড় নেতাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্তও দলের নিচুতলার কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিরোধীদের ডাকা হচ্ছে না বলে বিজেপির একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। পুরনোদের ব্রাত্য করে রাখা নিয়েও দলের একটা বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

আরও পড়ুন: সিবিআই নাকি আজ রেড করত ভাইপোর বাড়িতে: বিস্ফোরক সায়ন্তন

বৃহস্পতিবার দলের রাঢ়বঙ্গ কার্যালয়ে ধরনার পরিকল্পনা নেয় পুরনো কর্মীরা। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব তা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়। তারপরও পুরনো কর্মীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন। তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। আলোচনার জন্য কয়েকজন পুরানো কর্মীকে পার্টি অফিসে ডাকা হয়। সেখানে তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারধরের খবর চাউর হতেই বাইরে অপেক্ষারত পুরানো কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দু’পক্ষের মধ্যে ইট ছোঁড়াছুড়ি হয়। পার্টিঅফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। রাস্তায় থাকা দু’টি ম্যাটাডোরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিস বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। জেলা সভাপতি সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু হয়। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘটনার বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করে। এ ধরনের ঘটনা যে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না তার স্পষ্ট বার্তা দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর আঁচ পেয়ে রাজ্য নেতৃত্ব জ়োন পর্যবেক্ষক ও জেলা সভাপতির কাছ থেকে রিপোর্ট চান। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজস্ব নেটওয়ার্কে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেয়। তাতে ঘটনার পিছনে উভয় পক্ষের দোষ রয়েছে বলে ধরা পড়ে। এরপরই রাজ্য নেতৃত্বকে উভয় পক্ষকে শোকজ করার জন্য বলা হয়। সেই মতো রাজ্য সভাপতি উভয় পক্ষের ১৪ জনকে শোকজ করার জন্য নির্দেশ দেন।

বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা স্মৃতিকান্ত মণ্ডল বলেন, “শোকজ করে দল আমাদের স্বীকৃতি দিল। সেই দিন আমাদের প্ররিকল্পনা করে মারধর করা হয়। জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী আগে তার পোষা গুণ্ডাদের মদ খাইয়ে রেখেছিল। তাঁরা আমাদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।”

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যসাথী বিতর্ক: দু’ঘণ্টা পরও ইমার্জেন্সিতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে কিশোর

Next Article