Binay Tamang: ভাঙছে মোর্চা, বদলাচ্ছে সমীকরণ, পাহাড়ে নতুন দল গড়তে পারেন বিনয়!

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Sep 26, 2021 | 11:44 PM

Jalpaiguri: বিনয়ের এই মন্তব্যই উস্কে দিয়েছে জল্পনা। তাহলে কি এ বার নতুন করে দল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছেন তামাং?

Binay Tamang: ভাঙছে মোর্চা, বদলাচ্ছে সমীকরণ, পাহাড়ে নতুন দল গড়তে পারেন বিনয়!
বিনয় তামাং, ফাইল ছবি

Follow Us

জলপাইগুড়ি: পুরোপুরিই তবে ভাঙতে চলেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা? পাহাড়-নীতিতে ক্রমেই চড়ছে নতুন রঙ। রবিবার অন্তত এমনই ইঙ্গিত দিলেন পাহাড়ের নেতা বিনয় তামাং (Binay Tamang)। সেপ্টেম্বরেই আত্মপ্রকাশ করেছে অনীত থাপার নতুন দল। বিনয়পন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন রূপে পাহাড়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। অন্যদিকে বিনয়ের সঙ্গে বিমলের ‘কাছাকাছি’ আসাও চোখ এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। একরকম রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ নিতে চলেছেন বিনয়, বার্তাটা যেন ছিল এমনই। কিন্তু, সেই বার্তায় খোদ বিনয়ই যেন জল ঢেলে দিলেন। রবিবার, জল্পনা উস্কে জানালেন পাহাড়ের উন্নতির জন্য পৃথকভাবে কাজ শুরু করা হবে।

এদিন, মেটেলি ব্লকের সামসিং চাবাগানের বিএফপি স্কুল প্রাঙ্গণে তৃতীয় অধ্যায় নামের সামাজিক মঞ্চের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিনয় বলেন, “পাহাড়েক উন্নতি নিয়েই আমরা চিন্তিত। জমির পাট্টা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত সমস্যা নিয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব। প্রাথমিকভাবে তৃতীয় অধ্যায় নামের এই সামাজিক মঞ্চের মাধ্যমে কাজকর্ম করা হবে। ধীরে ধীরে তার রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “গোর্খাল্যান্ড এখন ইস্যু নয়। জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে জমির অধিকার দরকার। সে বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্রুত কথা বলতে হবে। পাশাপাশি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আমরা আলোচনা করব।”

বিনয়ের এই মন্তব্যই উস্কে দিয়েছে জল্পনা। তাহলে কি এ বার নতুন করে দল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছেন তামাং? বিনয়পন্থীদের সেই দল কি গুরুঙ্গ ও অনীত অনুগামীদের বাইরে থেকে এক স্বতন্ত্র পরিচয় গ্রহণ করবে না এই দুটি দলের কোনও একটির সঙ্গে হাত মেলাবে? এমন একাধিক প্রশ্ন এখন শৈলশহরের রাজনীতিতে।

পাহাড়ে নীতি ‘গাভীর মতো চরে’। শৈলরানির আবহাওয়া কেবল খামখেয়ালি নয়, রাজনীতিও রঙিন। ফের পাহাড়ি-রাজনীতিতে নতুন রঙ। সম্প্রতি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পদ ছেড়েছিলেন বিনয় তামাং (Binay Tamang)। ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন বিমলের হাতে। কার্যত ‘একা’ হয়ে পড়েছিলেন অনীত থাপা (Anit Thapa)। তখনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, নতুন দল গড়তে চলেছেন অনীত। সেই জল্পনায় সিলমোহর আগেই পড়েছিল। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নতুন দল আত্মপ্রকাশ করে অনীতের।

এই রোদ, এই মেঘে ঢাকা। এই বৃষ্টি তো এই বরফ। ‘পাহাড়-কি-রানির’ আবহাওয়ার মতোই খামখেয়ালি রাজনীতি। ২০০৭ থেকে ২০২১, চোদ্দো বছরে পাহাড় রাজনীতিতে ঘটেছে অনেক পটপরিবর্তন। কিছুদিন আগেই, সমস্ত ‘শীতলতা’ পরিত্যাগ করে প্রায় ঘণ্টাতিনেকের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিমল গুরুঙ্গ ও বিনয় তামাং। বৈঠক শেষে বিনয় বলেছিলেন, “পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য  কোনও রাজনৈতিক দলই কাজ  করেনি। আমরা পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত। তারজন্য় যা যা করতে হয় সব পদক্ষেপ করতে রাজি। আমাদের বৈঠকেও পাহাড়ের সমস্যা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।”

বিনয়-বিমলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যে ‘সম্প্রীতির’ ছবি প্রকাশ্যে আসে তাতে স্পষ্ট অন্তর্বিভেদ না মিটলেও দলের ভাঙন রোখার ‘আশঙ্কা’ থেকেই এই পদক্ষেপ দুই নেতার। বিনয়কে সঙ্গে নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী সহ শীর্ষ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন বিমল, ইঙ্গিত ছিল এমনটাই। অন্যদিকে, ‘দিদির’ সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেনি বলেই দাবি করেছিল অনীত শিবির। এমনকী, তামাং-শিবিরের অনেকেই যে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এমন কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল।

২০০৭ সালে বিনয় তামাং, বিমল গুরুঙ্গ ও অনীত থাপার মিলিত প্রয়াসের নাম গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ২০১৭তে, পাহাড়ের রাজনীতিতে পটপরিবর্তন। পৃথক গোর্খাল্য়ান্ডের দাবিতে অশান্তি হয়ে ওঠে পাহাড়। তখন বিমল গুরুঙ্গ (Bimal Gurung), রোশন গিরিদের বিরুদ্ধে খুন, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, হিংসা ছড়ানো-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার। গ্রেফতারি এড়াতে প্রায় সাড়ে তিন বছর আত্মগোপন বিমলের। তারপরেই চিড় ধরে সম্পর্কে। ‘শীতল বিচ্ছেদে’ জড়িয়ে পড়েন বিনয়-বিমল। অনীত থাপার নীরব সমর্থন প্রাপক বিনয় তামাং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জানিয়ে দেন তৃণমূলের পক্ষে লড়াই করলেও আলাদা করে প্রার্থী দেবে তাঁর দল।

ওদিকে, সাড়ে তিন বছরের অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে পাহাড়ে ফেরেন গুরুঙ্গ। তৃণমূলের পক্ষেই লড়বেন গুরুঙ্গপন্থীরা এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দেন পাহাড়ের ‘বেতাজ-বাদশা’। বিনয়-বিমলের এই শীতল লড়াইয়ের কথা স্মরণ করেই পাহাড়ে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। উল্টে, ‘পাহাড়বন্ধুদের ভরসা করে’ তিনটি আসন ছেড়ে দেন মমতা।

কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে হালে পানি ফেরেনি। মোর্চার দুই তরফেই ইঙ্গিত,  ভোট ভাগাভাগিতে দার্জিলিং ও কার্শিয়াং-এ আসন খোয়ায় মোর্চা। যথারীতি তা না-পসন্দ শাসকদলের। মোর্চা শিবিরের সূত্রেই খবর, নির্বাচন আবহে যা কেবল ‘পরামর্শ’ ছিল, ভোটের পর তাই ‘চাপে’ রূপান্তরিত। রাজ্যের শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে কার্যত চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেই দাবি করেছেন মোর্চা শিবিরের কেউ কেউ। নির্বাচনের অনতিপরেই তাই দলত্যাগ করেন বিনয় তামাং। সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন বিমলের হাতে। এরপরেই অনীত থাপার সঙ্গে কার্যত ‘দূরত্ব’-এর সূত্রপাত। এ বার বিনয়ের নতুন দল প্রকাশ হলে পুরোপুরিই ভেঙে যাবে গোর্খাজনমুক্তি মোর্চা। এমনকী পাহাড়ে জন্ম নেবে তিনটি স্বতন্ত্র দল। তা শৈলরানির রাজনীতিতে কতটা সময়োপোযোগী সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: ‘মাদার ডেয়ারি নয়, মায়ের দুধ খেয়েছি’, চা-চক্রে দিলীপের নিশানায় ফের মমতাই

 

 

 

 

Next Article