
জলপাইগুড়ি: সামনেই আবার বিধানসভা ভোট। এরইমধ্যে এসআইআর হাওয়ায় ক্রমেই তপ্ত হচ্ছে বঙ্গের রাজনৈতিক আঙিনা। তারমধ্যে কোন্দল কাঁটায় ফের জেরবার তৃণমূল। কার্যত মহামারির মতো অঞ্চলে অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে আদি ও নব্য তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। একেবারে রণংদেহী মূর্তিতে দেখা গেল প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতিকে। নতুন যিনি অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি সিপিএমের হার্মাদ। তাই প্রয়োজনে দলে সমান্তরালভাবে সংগঠন চালানো হবে। জরুরি ভিত্তিতে সভা ডেকে অনুগামীদের জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি। শুধু তাই নয় বিক্ষুব্ধদের বৈঠকে দ্রুত অঞ্চল সভাপতি বদলেরও দাবি উঠল।
কয়েকদিন ধরেই চাপানউতোর চলছিল জলপাইগুড়ির বাহাদুর অঞ্চলে। এবার এই কোন্দল ছড়িয়ে পড়ল জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভার গরাল বাড়ি অঞ্চলে। নতুন অঞ্চল সভাপতি মফিদার রহমান সিপিএম ছেড়ে তৃনমূলে নবাগত। তাঁকে অঞ্চল সভাপতি হিসেবে মানতে নারাজ তৃণমূল আদি কর্মীরা। বারবার ধেয়ে আসছে ‘হার্মাদ’ কটাক্ষ। শনিবার রাতে গরাল বাড়ি অঞ্চলে একটি জরুরি বৈঠক ডাকে আদি তৃণমূলের কর্মীরা। সেখানেই তাঁরা এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
২১ সদস্য বিশিষ্ট গরাল বাড়ি অঞ্চল। ১৩ জন তৃণমূল সদস্য। বাম সদস্য ৭ জন। বিজেপির ১ জন। ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৮৫০০ জন। ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূল প্রার্থীর লিড ছিল প্রায় ৩৭০০ ভোটে। চব্বিশ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে জলপাইগুড়ির বেশিরভাগ অঞ্চলে বিজেপি এগিয়ে ছিল। সেখানে গরাল বাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১৮০০ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। এখানেই নতুন অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছে মফিদার রহমান। তাঁর বিরুদ্ধেই ধেয়ে আসছে লাগাতার আক্রমণ।
তপন সাহা নামে এক আদি তৃণমূল কর্মী বলেন, “এই নতুন অঞ্চল সভাপতি সিপিএমের হার্মাদ ছিল। বাম জমানায় এখানকার অনেক তৃণমূল কর্মীকে মেরে তাঁদের জমি দখল করেছে। এই ধরনের লোককে সভাপতি করায় দলের ক্ষতি হবে।” ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গরাল বাড়ি অঞ্চলের যুব তৃণমূল সভাপতি জিয়ারুল রহমান। কটাক্ষের সুরেই বলেন, “এমন একজনকে অঞ্চল সভাপতি করা হল যে পুরো অঞ্চলটাই চেনে না। ক’টা বুথ আছে তাই জানে না। তাই আমরা এই অঞ্চল সভাপতি কে মানি না। আমরা অঞ্চল সভাপতির বদল চাই।”
আদি তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি শাহজাহান আলম বলেন, “আমরা ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করি। সেইসময় সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করার মতো লোক ছিল না। ২০১৩ সাল অবধি এই অঞ্চল সিপিএমের দখলে ছিল। আমরা লড়াই করতাম। কিন্তু আমাদেরকে অন্ধকার রেখে যাকে নতুন অঞ্চল সভাপতি করা হল সে তৃনমূলে নবাগত। আগে কোনও দিন যুব তৃনমূল পর্যন্ত করেনি। তাকে কার নির্দেশে হঠাৎ করে অঞ্চল সভাপতি করা হল তা আমরা জানি না। আমরা এই অঞ্চল সভাপতিকে মানি না। আমরা তৃণমূল ছাড়ব না। তাই অঞ্চল সভাপতি বদল করা না হলে আমরা এই অঞ্চলে দিদির পতাকা নিয়ে সমান্তরাল ভাবে তৃণমূল দল চালাব।”
যদিও এসব কথায় বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ নতুন অঞ্চল সভাপতি মফিদার রহমান। তিনি বলেন, “কে কি বলল তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাই ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে আগের চেয়ে আরও বেশি ভোটে দলকে কি ভাবে জেতানো যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” অন্যদিকে তৃনমূলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “দলের মধ্যে কাউকে নিয়ে কোনও ক্ষোভ থাকতেই পারে। সেই সমস্যা মেটাতে দল নিশ্চয়ই সচেষ্ট থাকবে। তাই দলের সমস্যা বাইরে না বলে দলের অভ্যন্তরে বলাই ভাল।” তবে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য জীবেশ দাস বলছেন, “শুধু জলপাইগুড়ি জেলা নয়। গোটা রাজ্যজুড়ে তৃনমূলের এই ঝামেলা চলছে। যারা আদি তৃণমূল ছিল তাদের দলের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”