জলপাইগুড়ি: চলছে সতর্কতামূলক প্রচার। ক্য়াম্পের সামনে ঝুলছে রাজ্য়ের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) ছবি। জাতীয় সড়কের উপর গোটা প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ নয়, বালি মাফিয়ারা! একটি দুর্ঘটনার জেরে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এল বানারহাট ব্লকেক গয়েরকাটায়। প্রশ্নের মুখে জেলা প্রশাসন।
অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই এশিয়ান হাইওয়ের ৪৮ নং সড়কের পাশে তাঁবু খাটিয়ে পরিবহনমন্ত্রী ববি হাকিমের (Firhad Hakim) ছবি লাগিয়ে ট্রাক ডাম্পার মালিকদের একটি সংগঠন রাতের অন্ধকারে গাড়ি থামিয়ে সচেতনতার নামে ওভারলোডিং ট্রাক, ডাম্পার আটকে মোটা টাকা তুলছে। অভিযোগ, একটি ক্যাম্প খাটিয়ে সেখানে রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রীর ছবিও ব্য়বহার করা হয়েছে। ওভারলোডিংয়ের মাসুল হিসেবে শুধু মোটা টাকাই নেওয়া হচ্ছে এমন নয়, কখনও কখনও বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে গোটা ট্রাকটাই বলে অভিযোগ! শুক্রবার, একটি মাছ বোঝাই ট্রাক রাস্তার ওপরে লাগানো গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে পড়ে। অল্পের জন্য যদিও প্রাণে বেঁচে যান চালক। আর তখনই ধরা পড়ে যায় ওই ভুয়ো রক্ষকেরা।
এর আগেও ওই এলাকায় পুলিশের চেক পোস্টে গাড়ি চেকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বানারহাট থানার এক পুলিশ আধিকারিকের। তারপরই জেলা প্রশাসনের তরফে তুলে দেওয়া হয় সেই পুলিশি চেক পোস্ট। এই পুলিশি চেক পোস্ট না থাকারই সুযোগ নিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ট্রাক ডাম্পার মালিকদের ওই সংগঠনের সঙ্গে বালিপাচারকারী ও বালি মাফিয়ারা যুক্ত। রাতের বেলা, যখন জাতীয় সড়ক ধরে অন্যান্য পাথক-সিমেন্ট -বালি বোঝাই গাড়ি যেত, তখন হিসেবে গরমিল দেখলেই নিজেদের সংগঠনের বাইরের গাড়িটিকে আটক করত অভিযুক্তরা। অভিযোগ, তারপরেই মোটা টাকা দিয়ে রফা সেরে ফেলত দুই পক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এশিয়ান হাইওয়ের মতো জাতীয় সড়কে কী করে প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও চলছিল এই ভুয়ো ক্যাম্প? প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে ওই ক্যাম্পে কেবল পরিবহন মন্ত্রীর (Firhad Hakim) ছবি লাগানো ছিল এমন নয়, ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু পুলিশ অধিকর্তাও। তাহলে কি এই বালি মাফিয়া-রাজের নেপথ্য়ে রয়েছে শাসক শিবির? যেখানে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, এমনকী, বালি মাফিয়ারাজ রুখতে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মমতা-সরকার, সেখানে পরিবহন মন্ত্রীর ছবি দিয়ে কী করে দিনের পর দিন এই ভুয়ো ক্যাম্প চলে? এর পেছনে কি তবে কোনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ রয়েছে? এমনই প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল।
যদিও ট্রাক মালিকদের সংগঠনের পক্ষে অঙ্কিত আগরওয়াল তাঁদের সংগঠনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যারা ওভারলোডিং গাড়ি চালাচ্ছে তারাই আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। যারা ওভারলোডিং গাড়ি চালাচ্ছে আমরা তাদের হাতজোড় করে অনুরোধ করে ফেরত পাঠাচ্ছি। জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার ,স্থানীয় থানার আইসির অনুমতি নিয়েই আমরা এই সচেতনতামূলক প্রচার করছি।” জলপাইগুড়ি অতিরিক্ত পুলিশ ওয়াংডেন ভুটিয়া ফোন করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের কোনো প্রকার অনুমতি পুলিশের তরফে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ অধিকর্তা।
গয়েরকাটার সিপি আই(এম) নেতা বিরাজ সরকার বলেন, “আমি অভিযোগ পেয়েছি সম্প্রতি, গয়েরকাটার এশিয়ান হাইওয়ের ৪৮ এর ওপর বিঘা লাইনের সামনে কিছু তোলাবাজরা টাকা তুলছে। সেখানে আবার রাজ্যের মন্ত্রী ববি হাকিমের ছবি লাগানো। কিছু গাড়ির চালকরা বলছেন বাইরের কিছু লোক এসে এইসব অসামাজিক কাজ করছেন। এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ রয়েছে। সামনেই গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস। গতকাল রাতে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।”
বিজেপির উত্তরপূর্ব মন্ডল বিজেপির সভাপতি বিশ্বনাথ রায় বলেন, “তৃণমূলের যোগসাজশেই এই তোলাবাজি হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের একাংশ এর সঙ্গে জড়িত। তৃণমূল নেতারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দু’ভাবেই এর সঙ্গে যুক্ত না হলে ফিরাদ হাকিম মন্ত্রীর ছবি লাগিয়ে রাস্তার মধ্যে গাড়ি থামিয়ে তোলাবাজি করছে। আগে সেখানে এক পুলিশ কর্মীর একজনের মৃত্যু হয়েছে তার পরে সেই ক্যাম্প তুলে দেওয়া হয়। সেই সুযোগেই এই তোলাবাজি আর মাফিয়ারাজ চলছে।”
যদিও, বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক শিবির। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য রঞ্জিত লাকরা বলেন, “বিঘা লাইনের এশিয়ান হাইওয়ের ওপর গার্ডরেল লাগানোর কারণে রাতের অন্ধকারে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। টাকা আদায়ের কথা জানি না। কারা করেছে বলতে পারছি না। বিগত কিছুদিন ধরে পরিবহনমন্ত্রীর ছবি দিয়ে ক্যাম্প নজরে এসেছে। তবে এ বিষয়ে আমরা বিশেষ কিছু জানি না। দলের কোনও কর্মী এর সঙ্গে জড়িত নয়।” আরও পড়ুন: সর্বশিক্ষা অভিযানের হোস্টেল দুর্নীতির ‘ঘুঘু’! হিসেব মিলছে না ৩ কোটি টাকার…