জলপাইগুড়ি: দুর্গাপুজোয় ‘শ্রীভূমি’ কলকাতা ও শহরতলীর মানুষকে দুবাই ঘুরিয়েছে। কালীপুজোয় সেই দুবাই-সফর জলপাইগুড়িতে। সেই বুর্জ খলিফা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের এই জেলায়। এমনও জানা গিয়েছে, কলকাতার বুর্জ খলিফাকে উচ্চতায় নাকি কিছুটা টক্করই দিয়েছে জলপাইগুড়ি। এই ‘অত্যাশ্চর্য’কে দেখবে বলে পারলে ভোর থেকে লাইন দেন জলপাইগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকার মানুষ! সে এক চরম হই হই চলছে জলপাইগুড়ির গোমস্তা পাড়ায়।
বুর্জ খলিফা দেখবে বলে জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূর থেকে টোটো রিক্সা রিজার্ভ করে জলপাইগুড়িতে আসছেন প্রচুর দর্শনার্থী। অভিযোগ, পুলিশ সেই টোটো গুলিকে পুজো প্যান্ডেল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আটকে দিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। আইন না মানার অভিযোগে বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে টোটো রিক্সাগুলিকে। এ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভও। তবু মানুষ পথে নামবেনই।
কলকাতার শ্রীভূমি পুজো কমিটি দুবাইয়ের গগনচুম্বী বুর্জ খলিফাকে এবার থিম হিসাবে তুলে ধরে দুর্গাপুজোর সময়। পুজোর চারটে দিন বাকি মণ্ডপ ছেড়ে সমস্ত লাইম লাইট ছিল এইদিকেই। প্রশংসা থেকে বিতর্ক বাদ যায়নি কিছুই। এমনকী ভিড় সামাল দিতে নাকাল প্রশাসনকে বাধ্য হয়ে পুজো মণ্ডপে প্রবেশ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবু…।
সেই হিড়িককে কালীপুজোয় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ির গোমস্তা পাড়ার নবারুণ সংঘে। এমনকী শোনা যাচ্ছে, কলকাতার বুর্জ খলিফা যেখানে ছিল ১০৪ ফুট উচ্চতার, সেখানে জলপাইগুড়ির বুর্জ খলিফা ১০৬ ফুট।
গত বুধবার এই কালীপুজোর উদ্বোধন হয়। আর উদ্বোধনের পর থেকে হাজারে হাজারে মানুষের ঢল নামছে গোমস্তা পাড়ায়। চারদিনেই একেবারে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। এখানেও মানুষের ঢল সামলাতে কাল ঘাম ছুটছে পুলিশের।
একে মানুষের ভিড়, তার উপর আবার টোটোর বাড় বাড়ন্ত। গত বৃহস্পতিবারই মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিকেল চারটের পর থেকে জলপাইগুড়ি শহরে টোটো চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।
অভিযোগ প্রশাসনের এই ঘোষণা গ্রামেগঞ্জে পৌঁছয়নি। ফলে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি ব্লক-সহ জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ বুর্জ খলিফা দেখবে বলে শুক্রবার রাতে টোটো রিজার্ভ করে জলপাইগুড়ি শহরে আসেন।
কিন্তু জলপাইগুড়ি সদর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে টোটোগুলিকে শহরে ঢোকার মুখে আটকে দেওয়া হয়। যাত্রীদের নামিয়ে টোটো বাজেয়াপ্ত করে থানায় নিয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন গ্যাঁটের টাকা খরচ করে দূর দূরান্ত থেকে এসে দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়, তেমনই সমস্যায় পড়েন টোটো চালকরাও।
শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন বাড়ি থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা পথ পার করে। তাঁর অভিযোগ, “বুর্জ খলিফা দেখতে এসেছিলাম। বাচ্চা নিয়ে মাঝ পথে টোটো থেকে নেমে যেতে হল। এবার ঘুর পথে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে ওসি ট্রাফিক বাপ্পা সাহা বলেন, “বাইরে থেকে টোটো ঢুকে গোটা শহরে যানচলাচল স্তব্ধ করে দিচ্ছে। দু’দিন ধরে মাইকিং করা হয়েছে। বলা হয়েছে টোটো নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তারপরও এমনটা চলছে। তাই নিয়ম ভাঙায় টোটো আটক করা হচ্ছে।”