SIR in Bengal: আত্মীয়কে বাবা বানিয়ে বিপাকে মমতার স্বামী তৌসেফ আলি

Jalpaiguri: তৌসেফকে তিনি চেনেন না বলে দাবি করলেন আয়ুব আলি। বলেন, "আমি তাঁদের চিনি না। যখন জানতে পারি আমার ভোটার কার্ড, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর ইত্যাদি ব্যবহার করে তাঁরা ভুয়ো নথি তৈরি করেছেন, তখন আমি লিখিত অভিযোগ করি। তারপরও দেখলাম খসড়া তালিকায় নাম রয়ে গিয়েছে।"

SIR in Bengal: আত্মীয়কে বাবা বানিয়ে বিপাকে মমতার স্বামী তৌসেফ আলি
স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে তৌসেফ আলিImage Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Dec 20, 2025 | 4:06 PM

জলপাইগুড়ি: তিন সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। তাঁর বাড়ি যে উত্তর প্রদেশে, তা বোধহয় ভুলতে বসেছেন। জলপাইগুড়িতে শ্বশুরবাড়িই এখন তাঁর কাছে নিজের বাড়ি। দিব্যি বাংলায় কথা বলা শিখেছেন। কিন্তু, একটা ভুল যে করেছেন, এখন নিজেই স্বীকার করছেন। এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ওই ‘ভুলের’ জন্যই চিন্তায় উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের যুবক তৌসেফ আলি। স্ত্রীর আত্মীয়কে বাবা সাজিয়ে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ যাবতীয় নথি করেছিলেন। এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর পর ওই আত্মীয় দাবি করেছেন, তৌসেফের নাম কেটে দেওয়া হোক। এখন কী হবে, তা ভেবেই রাতের ঘুম উঠেছে তৌসেফ ও তাঁর স্ত্রী মমতা খাতুনের। তবে এসআইআর প্রক্রিয়ার জন্য তৌসেফ ও মমতার প্রেমকাহিনি ফের সবার সামনে এসেছে।

জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভার বাহাদুর গ্রামপঞ্চায়েতের ১৭/৬ নম্বর বুথের বাসিন্দা মমতা খাতুন। বছর চোদ্দো আগে একদিন অন্য একজনকে ফোন করতে গিয়ে ভুল নম্বরে ফোন করে ফেলেছিলেন। তখনই পরিচয় হয়েছিল তৌসেফের সঙ্গে। তারপর তাঁরা কথা বলতেন। প্রেম হয়ে যায়। প্রেমের টানে জলপাইগুড়িতে আসেন তৌসেফ। ২ জনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুই পরিবারই এই বিয়েতে রাজি হয়নি। এরপর তাঁরা দুই পরিবারের অমতেই বিয়ে করেন।

বিয়ে করে মমতাকে নিয়ে তৌসেফ চলে যান তাঁর বাড়ি এলাহাবাদে। কিন্তু তৌসেফের পরিবার তাঁদের ঠাঁই দেয়নি। অগত্যা এক কাপড়েই জলপাইগুড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। মমতার বাবা তাঁদের থাকার জায়গা দেন। সেই থেকে শ্বশুরবাড়িই নিজের বাড়ি হয়ে যায় তৌসেফের। তাঁদের তিন সন্তান হয়।

তৌসেফের যাবতীয় সরকারি নথি উত্তরপ্রদেশের বাড়িতে থাকায়, তা আর আনতে পারেননি। তখন তাঁরা তাদের আত্মীয় আয়ুব আলিকে বাবা সাজিয়ে ভোটার কার্ড সহ যাবতীয় নথি তৈরি করেন বলে দাবি ওই দম্পত্তির। যদিও আয়ুব আলির বক্তব্য, তিনি তৌসেফকে চেনেন না।

SIR প্রক্রিয়া চালু হতেই বেঁকে বসেন আয়ুব আলি। এনুমারেশন ফর্ম আসতেই তিনি স্থানীয় BLO-র কাছে আপত্তি জানান। বিডিও অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আয়ুবের অভিযোগ, লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরও তৌসেফের নাম খসড়া তালিকায় রয়েছে।

আয়ুব আলি তৌসেফের নাম কেটে দেওয়ার দাবি জানাতেই চিন্তায় পড়েছেন তৌসেফ ও মমতা। তাঁরা যে ভুল করেছেন, তা স্বীকার করছেন। তবে এখন চাইছেন, সরকার কোনও ব্যবস্থা নিক। মমতা খাতুন বলেন, “আমরা বাঙালি মুসলিম। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ি বিহারি মুসলিম। আমাদের বিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মেনে নেননি। ফলে বাধ্য হয়ে আমি বাপের বাড়িতেই বসবাস করছি। এরপর সন্তান হয়। তখন তাদের পরিচয়পত্র বানাতে আমার স্বামীর বাবা হিসেবে আমাদের এক আত্মীয়ের নাম ব্যবহার করি।” তৌসেফ আলি বলেন, “উনি আমার স্ত্রীর বাবার মাসতুতো ভাই। আমরাই অবশ্য ওঁর কাছে গিয়েছিলাম। সেইসময় উনি রাজি ছিলেন। তাই তাঁর ভোটার কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে আমি সরকারি নথি তৈরি করেছিলাম। কিন্তু এখন তাঁরা বলছেন আমাকে নতুন করে ব্যবস্থা করে নিতে। আমি চাই সরকার আমার ব্যবস্থা করে দিক।” তৌসেফের শ্যালক রাকেশ রহমান বলেন, “আমার জামাইবাবুর এই সমস্যা না মিটলে, তাঁদের বাচ্চারা ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বে।”

তৌসেফকে তিনি চেনেন না বলে দাবি করলেন আয়ুব আলি। বলেন, “আমি তাঁদের চিনি না। যখন জানতে পারি আমার ভোটার কার্ড, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর ইত্যাদি ব্যবহার করে তাঁরা ভুয়ো নথি তৈরি করেছেন, তখন আমি লিখিত অভিযোগ করি। তারপরও দেখলাম খসড়া তালিকায় নাম রয়ে গিয়েছে।” আয়ুব আলির স্ত্রী বাটলি খাতুন বলেন, “যদি অবিলম্বে ব্যবস্থা না হয়, তবে আমরা এই বিষয় নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব।”

এই নিয়ে ওই বুথের BLO ফজলুল রহমান বলেন, “কারও নাম আমরা কাটতে পারি না। যা করার কমিশন করে। এনুমারেশন ফর্ম জমা নেওয়ার পর প্রথম পর্যায়ে যারা মৃত ও স্থানান্তরিত কেবলমাত্র তাদের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু যাঁদের নাম নো ম্যাপিংয়ের তালিকায় আছে, তাঁদের হিয়ারিংয়ে যেতে হবে। তখন ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। আর তৌসেফের নাম নো ম্যাপিংয়ের লিস্টে রয়েছে।”

ঘটনার কথা টিভি নাইন বাংলার কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন বিজেপি পরিচালিত বাহাদুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান অমিত দাস। তিনি বলেন, “এই জাতীয় প্রচুর নাম জলপাইগুড়ি জেলায় আছে। তাই জলপাইগুড়ি জেলার ৭৭ হাজারের বেশি ভোটারকে ডেকে পাঠাবে কমিশন। বিজেপি চায় ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা বাহাদুর অঞ্চলের ব্লক কমিটির সদস্য নুরুল আলম প্রধান বলেন, “আমাদের দলের পরিষ্কার কথা, কোনও বৈধ ভোটারের যেন নাম না কাটা যায়। এখানে অভিযুক্ত নিজেই তাঁর দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তাই আইন আইনের পথে চলবে।”