‘এ শ্মশানে করোনা-দেহ পুড়েছে, স্যানিটাইজ না করা হলে আমরা মরা পোড়াব না’

মহামারীর (COVID-19) বাংলার কোণে কোণে হৃদয় বিদারক সব ছবি।

'এ শ্মশানে করোনা-দেহ পুড়েছে, স্যানিটাইজ না করা হলে আমরা মরা পোড়াব না'
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: May 06, 2021 | 11:12 PM

জলপাইগুড়ি: করোনা (COVID-19) প্রাণ কাড়লে এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে দাহ করা হত নিথর দেহগুলি। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরও করুণ পরিস্থিতি। সারি সারি দেহ প্লাস্টিকে বাধা। পড়ে রয়েছে শ্মশানে। যমে নিলেও ডোমে নিচ্ছে না। মর্মন্তুদ এই ছবি মনে করাচ্ছে বইয়ের পাতায় পড়া কোনও মহামারির গল্প। এতদিন আতঙ্ক ছিল সংক্রমণে মৃত্যু নিয়ে। এখন মৃত্যুর পর কী পরিণতি হবে তাও ভাবাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এরকমই এক ঘটনায় জলপাইগুড়ি শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়।

জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে মারা যাওয়া করোনা রোগীর মৃতদেহ এতদিন দাহ করা হত জলপাইগুড়ি জেলার শাহুডাঙি শ্মশানে। সম্প্রতি শাহুডাঙি শ্মশানের বেহাল অবস্থার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। সমস্যা মেটাতে তড়িঘড়ি পুরসভা ও অন্যান্য দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীদের দেহ জলপাইগুড়ি শহরে অবস্থিত মাসকলাইবাড়ি হিন্দু শ্মশানে গভীর রাতে দাহ করা হবে। এরপর শ্মশান স্যানিটাইজ করা হবে। তারপর আবার সারাদিন ধরে অন্যান্য মৃতদেহগুলি দাহ হবে। আবার গভীর রাতে সারি সারি করোনা রোগীর মৃতদেহ দাহ। পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে কাজ।

আরও পড়ুন: প্রচারে ‘হিংসার উস্কানি’, মিঠুন-দিলীপের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি শ্মশানে আনা হয় তিনটি মৃতদেহ। এরপরই বাধে গোল। করোনা রোগীর মৃতদেহ আনা হয়েছে শুনে শ্মশান ছেড়ে পালায় দুই ডোম। এরপর তিনটি মৃতদেহের মধ্যে একটি মৃতদেহ দাহ করে অন্য দু’টি দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর ভোর থেকে একের পর এক সাধারণ মানুষের মৃতদেহ আসতে থাকে। অভিযোগ শ্মশান তখনও স্যানিটাইজ করা হয়নি। তাই আসেনি ডোমেরা।

পরে হাতে পায়ে ধরে ডোমদের আনা হলেও তাঁরা সাফ জানিয়ে দেয় শ্মশানে পিপিই কিট, মাস্ক ইত্যাদি পড়ে আছে। তাঁরা যেহেতু স্থায়ী কর্মী নন, তাই শ্মশান স্যানিটাইজ না হলে তাঁরা দাহ করার কাজ শুরু করবেন না। ঘটনায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে শ্মশানযাত্রীদের মধ্যে। খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে জলপাইগুড়ি পুরসভা। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্মশান স্যানিটাইজ করা হলে ফের শুরু হয় দাহ করার কাজ।

ঘটনায় জলপাইগুড়ি পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য।” তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বুধবার রাতে আমি নিজে দাহের সময় উপস্থিত ছিলাম। দাহ শেষ করে শ্মশান স্যানিটাইজ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আর একবার স্যানিটাইজ করে তারপর দাহ শুরু হয়। যেহেতু আজ প্রথম এই ধরনের রোগীর দেহ দাহ করা হল তাই সাময়িক ভাবে কিছু সমস্যা হয়েছে। এরপর থেকে এই সমস্যা মিটে যাবে।”