‘সুজাতা, আমি কি খুব পাপী? আমি কি খুব খারাপ? আমি কোনও মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াইনি’

শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী | Edited By: নির্ণয় ভট্টাচার্য্য

Dec 21, 2020 | 4:43 PM

সাংবাদিক বৈঠক ডেকেই শেষ করলেন ব্যক্তিগত জীবনের এক পর্ব।

সুজাতা, আমি কি খুব পাপী? আমি কি খুব খারাপ? আমি কোনও মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াইনি
ফাইল ছবি

Follow Us

কলকাতা: ‘সুজাতা তুমি ভালো থেকো। তোমার সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক শেষ। তোমায় ডিভোর্স নোটিস পাঠাচ্ছি।’  না, ব্যক্তিগত কোনও চিঠি নয়, এসব কথা সোমবার সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan)। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এদিন তিনি ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী সুজাতার প্রতি জমে থাকা মনের কষ্ট উগরে দেন এবং ব্যক্তিগত জীবনের এক পর্ব ‘শেষ ‘ হল বলে উল্লেখ করেন। স্ত্রী সুজাতার জীবনে তৃণমূল-পর্ব শুরু হতেই তাঁর সঙ্গে ‘দাম্পত্য-নীতি-নৈতিকতা’ শেষের বার্তা এদিন দিলেন স্বামী সৌমিত্র।

সোমবার বাংলা রাজনীতির দুনিয়ার এক দাম্পত্যের নাটকীয় বিচ্ছেদের কাহিনী। রাজনীতি কীভাবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এদিনের ঘটনাক্রম। স্ত্রী সুজাতা বেলা ১টা নাগাদ তৃণমূলে যোগ দিয়েই স্বামীকে সম্মান নিয়ে রাজনীতি করতে তৃণমূলে ফেরার বার্তা দেন। প্রত্যুত্তরে স্বামীও ডাকলেন সাংবাদিক বৈঠক। তখন বেলা দুটো। নিতান্ত এক অভিমানী দম্পতির কথোপকথন যেন উঠে এল এই দ্বিতীয় সাংবাদিক বৈঠকে। বৈঠক থেকেই তিনি স্ত্রীকে জানিয়ে দিলেন, “সুজাতা তোমায় ডিভোর্স দিচ্ছি। সব সম্পর্ক এখানেই শেষ করলাম।”

ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে তখন চোখের পাতা নামিয়েছেন সৌমিত্র। ফের বললেন, “দশ বছর আগে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছিলাম তোমায়। জেনে রেখো সৌমিত্র খাঁ তোমাকে নিশ্চিতভাবে ভালবেসেছিল।” ঘরে তখন পিনপতন শোনা যাবে এমন স্তব্ধতা। সাংবাদিকরাও কোনও প্রশ্ন করছেন না। অশ্রুসজল সৌমিত্র।

যে সৌমিত্রকে কড়া, তীক্ষ্ণ, ঝাঁঝালো ভাষায় প্রতিপক্ষকে বিঁধতে দেখেছেন সাংবাদিকরা, এদিন যেন তিনি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছেন। সৌমিত্র-সুজাতার এক অন্য রসায়ন দেখতে অভ্যস্ত রাজনীতির দুনিয়া। সালটা ২০১৯। সৌমিত্র তখন আদালতের নির্দেশে গৃহবন্দি। স্বামীর বদলে ময়দানে থেকে লড়াই করেছিলেন স্ত্রী। অগাধ বিশ্বাস ছিল তাঁর ওপর! জিতেওছিলেন সৌমিত্র। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খাঁ দম্পতির সেই রসায়ন বদলে গিয়ে উঠে গেল বিচ্ছেদের প্রাচীর।

সৌমিত্র এদিন পুরনো অনেক কথাই বলেছেন। বলেছেন, সুজাতা তাঁর কাছে কী ছিলেন! কতটা ভালোবাসা ছিল তাঁর প্রতি। তবে সঙ্গে উঠে এসেছে কিছু মান অভিমানের কথাও। বললেন, “অনেক রাগারাগি হয়েছে সুজাতা। কিন্তু আমি কোনওদিনও কোনও মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াইনি।” কথাগুলো যখন সৌমিত্র বলছিলেন, তখন তাঁকে কোনও রাজনীতিবিদ বলে মনেই হচ্ছিল না। বরং তিনি যেন একজন অভিমানী স্বামী, একজন ভাঙা হৃদয়ের প্রেমিক।

এদিন সাংবাদিকদের সামনেই সৌমিত্র হাউহাউ করে কেঁদেছেন। বলেছেন, “নিখাদ ভালোবাসা ছিল সুজাতা। আমি কি খুব পাপী? আমি কি খুব খারাপ?”  সৌমিত্রর গলায় এবং আচরণে আবেগ স্পষ্ট। এরপরই নিজেকে সামলে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে সুজাতা তোমার সব সম্পর্ক শেষ। আমার শ্রাবণী ফ্ল্যাটে এলে বা দিল্লি ফ্ল্যাটে এলে আইনজীবীকে নিয়ে আসবে। তোমার জিনিস ফিরিয়ে দেব। মিউচুয়াল ডিভোর্সের নোটিস দিলাম। আজ থেকে আর খাঁ পদবী ব্যবহার কর না, অনুরোধ তোমায়।”

যে কথাগুলো আর পাঁচটা  অভিমানী দম্পতি রুদ্ধদ্বারের আড়ালেই বলে থাকেন, এদিন তা প্রকাশ্যেই দেখল, শুনল বাংলা। খাঁ দম্পতির ব্যক্তিগত জীবন চলে এল প্রকাশ্যে। তবে এতকিছুর পরও নিজেকে সামলে নিয়েছেন সৌমিত্র। বরং তখনও মনেপ্রাণে দলের প্রতি দায়বদ্ধ তিনি। বললেন, “বিজেপি না থাকলে সৌমিত্র এক লাখ ভোটও পেত না। তোমাকে কে চিনত সুজাতা? তুমি কি রাজনীতির কিছু বুঝতে?” গলা নরম করে সুজাতাকে শেষবারের মত বোঝালেন, “সুজাতা দলে তোমার সম্মান ছিল। হয়তো পদ পাওনি। তবে সবাই বলত দাদা তোমার সব কিছু কিন্তু আজ বৌদির জন্যই! তুমি ভুল করলে সুজাতা….”। এরপরই তীর্যক সুরে বলে ওঠেন, “অভিষেকবাবুকে বলব, ওঁকে নিশ্চিত নেত্রী করতে।”

আরও পড়ুন: ‘কে বলতে পারে সৌমিত্র খাঁ টিএমসি-তে যোগ দেবেন না!’ তৃণমূলে এসেই জল্পনা উস্কালেন স্ত্রী

আবেগ-বিচ্ছেদ-কটাশ্রের আবহেই এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন সৌমিত্র। তবে ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানির আড়ালেই চোখ মুছতে দেখা গিয়েছে সৌমিত্রকে। অনেকেই বলছেন, সৌমিত্রর সাংবাদিক বৈঠকের সহ্গেই এদিন দাম্পত্য শেষ হল রাজনীতির হাড়িকাঠে।

Next Article