মালদা: স্কুলথছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের ( Gang Rape) অভিযোগ এলাকারই ৩ তৃণমূল কর্মীর (TMC Worker) বিরুদ্ধে। শাসকদলের মদতপুষ্ট হওয়ায় পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন বলে অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি রতুয়া থানার দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাকাইয়া গ্রামের।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, টিউশনি পড়তে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালুপুরের বাসিন্দা রহিমুল হক ওই নাবালিকাকে জোর করে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। রহিমুলের সঙ্গে আরও দুজন সঙ্গী ছিল বলে অভিযোগ। এরপর জোর করে ওই নাবালিকাকে জোর করে মাদক খাইয়ে অচৈতন্য় করে সারাদিন ধরে ধর্ষণ (Gang Rape) করে। এরপর গ্রামে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে কোনওরকমে প্রায় অচৈতন্য় অবস্থায় বাড়ি ফেরে ওই নাবালিকা। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর নিজের মা-বাবাকে সব কথা জানায় সে।
নির্যাতিতা ওই নাবালিকার বয়ানে, “আমি টিউশনি পড়তে গিয়েছিলাম। সেই সময় যাওয়ার আগেই রাস্তা থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় তিনজন। আমি একজনকে চিনতে পারি। বাকিদের পারিনি। ওরা আমার মুখে রুমাল বেঁধে জোর করে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফেরে তখন সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা। কোনওরকমে বাড়ি ফিরে এসে মাকে বলি।”
নাবালিকার মা চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বলেন, “মেয়েটা টিউশন পড়তে গিয়েছিল। অনেকক্ষণ ধরে বাড়ি না ফেরায় ওর টিউশন ক্লাসে গিয়ে খোঁজ নিই। মাস্টারমশাই জানান, মেয়ে নাকি ক্লাসেই আসেনি। আমার মাথায় হাত! ছুটে আসি বাড়িতে। তখনও শুনি ফেরেনি। আশেপাশের অনেক বাড়িতে খোঁজ করি। খোঁজ মেলে না। পরে দেখি মেয়েটা টলতে টলতে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। মেয়ে প্রথমে আমাকেও চিনতে পারেনি। তারপর, কোনওরকমে জলটল দিয়ে যখন জ্ঞান ফিরল, তখন হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে মেয়েটা আমার। তিনজন মিলে আমার মেয়েটাকে শেষ করে দিয়েছে।”
নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে যারা ধর্ষণ করেছে তারা তিনজনেই তৃণমূল কর্মী। তিনজনের মধ্যে রহিমুল হক সক্রিয় তৃণমূল কর্মী ও শাসক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ। তাই রতুয়া থানায় অভিযোগ করার পরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। এদিকে ওই নাবালিকা বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার পর থেকে সোজা বসতে পারছে না, এমনকী ঠিক করে কথা বলতে পারছে না বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা। এদিকে মূল অভিযুক্ত-সহ তিনজনেই বেপাত্তা। যদিও, রতুয়া থানার পুলিশের দাবি, তাঁরা কোনও অভিযোগ পাননি। এমন কিছু ঘটে থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।
ঘটনায় জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতীরা কোনও দলের হয় না। তবে যদি এই ঘটনায় কোনওভাবে শাসক শিবিরের কেউ যুক্ত থাকে তবে তা রেয়াদ করা হবে না। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হবে। পাল্টা বিজেপি জেলা সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “তৃণমূলের এটাই ধর্ম। ক্ষমতায় এসেছে বলে যেখানে যত অপরাধ সংঘটিত করা যায় তা করে চলেছে। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবে জেলা বিজেপি।”
উল্লেখ্য়, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায়, খুন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলির তদন্তভার ন্যস্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপর। সেই মোতাবেক চলতি সপ্তাহেই এক নাবালিকা ধর্ষণ-কাণ্ডে মানিকচকে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অন্যদিকে, বিজেপি কর্মীর মৃত্যু তদন্তে রতুয়াতে পা পড়েছে সিবিআইয়ের। তদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গে ক্যাম্প করে রয়েছেন সিবিআইয়ের প্রতিনিধিদের একটি দল। সেখানে ফের ধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য় ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: ‘পুরনো কথা’ ভুলে ‘ভাল ছেলে’ বাবুলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজে আগ্রহী অনুব্রত!
আরও পড়ুন: Unknown Fever: মালদায় ফের জ্বরের বলি মাত্র ১ মাসের শিশু!