Anubrata Mondal: ‘পুরনো কথা’ ভুলে ‘ভাল ছেলে’ বাবুলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজে আগ্রহী অনুব্রত!
Babul Supriyo: প্রসঙ্গত, বাবুল-কেষ্ট তরজা বরাবরই রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। খোদ মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছিলেন কেষ্ট মণ্ডল।
বীরভূম: সদ্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শাসক শিবিরে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ। বাবুলের সঙ্গে বরাবরই যাঁর বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে তিনি বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। অথচ, তৃণমূলে যোগদানের পরেই সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর শোনা গেল কেষ্ট মণ্ডলের গলায়। ‘ভাল ছেলের’ সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথাই এদিন স্পষ্ট জানালেন অনুব্রত।
বাবুল সুপ্রিয়র যোগদান প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেন, “বাবুল সুপ্রিয় ভাল ছেলে। আমরা খুশি ওঁ দলে এসেছেন। ভাল কাজ করবে। উন্নয়নের সঙ্গে থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। পুরনো কথা ভুলে যেতে হয়। মনে রাখতে নেই। আমি চাই ও দলের সঙ্গে থেকে ভাল কাজ করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, বাবুল-কেষ্ট তরজা বরাবরই রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। খোদ মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছিলেন কেষ্ট মণ্ডল। স্পষ্টই বলেছিলেন, দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ছাড়া আর কাউকে মানতে রাজি নন তিনি। সেই পরিস্থিতিতে বাবুলের প্রতি এত ‘সদয়’ মনোভাবের কারণ নিয়ে প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলের। খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কেবল যোগদান বলেই কি এই বিনম্রতা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, মুকুল বরাবরই দলের দক্ষ সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। সে বিজেপিতে হোক বা তৃণমূলে। তৃণমূলে থাকাকালীন কার্যত মুকুলের সমকক্ষ সংগঠক ছিলেন অনুব্রতই। দলের অন্দরে বরাবরই গুঞ্জন মুকুল-কেষ্ট সম্পর্ক বেশ শীতল। ফলে মুকুল ফের দলে ফেরায় নিজের এবং মুকুলের অবস্থানও কিছুটা পরোক্ষে স্পষ্ট করতে আগ্রহী ছিলেন কেষ্ট মণ্ডল। সেখানে বাবুল দলের কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন না। ফলে সেই অর্থে সরাসরি বিরোধের কোনও স্থান নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন আবহে, এনআরসি প্রসঙ্গে বাবুল-অনুব্রত তরজা প্রকাশ্যে আসে। অনলাইনে এনআরসি বঙ্গে চালু হতে পারে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছিল বিজেপির তরফে। সে প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেছিলেন, “কীসের অনলাইন? কে যাবে? মানুষ কী এত বোকা নাকি! যে সাইবার ক্যাফেতে হবে সেখানকার কম্পিউটার ভেঙে দেওয়া হবে। আর যে ফর্ম পূরণ করবে তার মাথা কামিয়ে ঠ্যাং আর শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হবে।” পাল্টা বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “অনুব্রত মণ্ডলের কী ঠ্যাং বা শিরদাঁড়া আছে? যার নিজেরই শিরদাঁড়া নেই সে আবার অপরের শিরদাঁড়া কী ভাবে ভাঙবে? একবার চেষ্টা করে দেখুন। যখন তিনি এই কথা বলছিলেন তখন হয়তো মাথায় অক্সিজেন পৌঁছায়নি।”
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার এই ঘটনাকে ‘বিরাট বড় সুযোগ’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন বাবুল। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যা ঘটার গত ৪ দিনেই ঘটেছে।শনিবার ক্যামার স্ট্রিটের অফিসে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বাবুল। বলেন, “আমি প্রথমেই খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। আমি রাজনীতি ছাড়ার যে কথা বলেছিলাম, সেটা পুরোপুরি হৃদয় থেকেই বলেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ৭ বছর পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য আমি যে কাজ করেছি, সেখানে একটা ফুলস্টপ এসে গিয়েছিল। কেন এসেছিল জানি না। এর পেছনে আমি যুক্তিও পাইনি। ৭ বছরের সময় পুরোপুরি ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। এটা কোনও প্রতিশোধের রাজনীতি নয়। আমি সুযোগ হিসেবে এটাকে দেখছি।”
যদিও বাবুল এ দিন বারবার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতি ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, তাতে কোনও ভনীতা ছিল না। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার তাঁর সিদ্ধান্ত যে বিরাট বড় একটা সুযোগ, এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে তাঁকে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই কোনও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হবে, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে আসা রাজ্যসভার আসনে তাঁকে প্রার্থী করে ফের একবার দিল্লি পাঠাতে পারে তৃণমূল। কারণ তিনি যে আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন, সে কথা এ দিন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই স্বীকার করেছেন এই সাংসদ। তৃণমূল যে উষ্ণতা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে, তাতে তিনি ‘আপ্লুত’ বলেও উল্লেখ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
আরও পড়ুন: Jitendra Tiwari: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরেছে মোদী-পদ্মের ছবি, জিতেন্দ্রর গতিপ্রকৃতিতে জল্পনা!