Maldah: টোটো চালিয়ে ‘দাদুভাই’কে বড় করেছেন; খড়গপুর আইআইটিতে পড়তে যাচ্ছে নাতি, আনন্দাশ্রু দাদুর
Maldah: শহরের বাঁধ রোডে টোটো চালান রতন হালদার। তাঁরই মেয়ের ছেলে অভিজিৎ। রতনবাবুর কাছেই থাকে মা-ছেলেতে। অভিজিতের মা অসুস্থ, বিছানাতেই শুয়ে থাকেন। বাবা আলাদা থাকেন। কোনও খোঁজই রাখেন না স্ত্রী, সন্তানের। দাদুর কাছেই সবকিছু অভিজিতের।

মালদহ: আদরের ‘দাদুভাই’কে খুবই কষ্ট করে বড় করেছেন তিনি। টোটো চালিয়ে কোনওমতে সংসার টানেন বৃদ্ধ। তবু নাতির পড়াশোনায় কার্পণ্য রাখতে চাননি। সেই নাতিই এবার মালদহ থেকে খড়গপুর আইআইটিতে যাবে পড়াশোনা করতে। দাদুর আনন্দ যেন আর ধরছে না। ইংরেজবাজার শহরের গ্রিনপার্ক এলাকায় বাড়ি অভিজিৎ রায়ের। মালদহ টাউন হাইস্কুলের ছাত্র ছিল সে। এবার জেইই অ্যাডভান্স পরীক্ষা দিয়ে সেই অভিজিৎই আইআইটি খড়গপুরে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে বিটেক পড়ার সুযোগ এসেছে তার। দারুণ খুশি পরিবারের সকলে। সোমবার এই কৃতীর সঙ্গে দেখা করতে যান প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। ফুল, মিষ্টি, লাগেজ ব্যাগ উপহার দেন তাকে। বলেন, “তুমি পড়তে যাবে জিনিসপত্র নিয়ে, তাই তোমার জন্য ব্যাগ। আর আমি বিধায়ক ছিলাম, সাংসদ ছিলাম ওখানে। কোনও চিন্তা নেই। কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন করবে।”
শহরের বাঁধ রোডে টোটো চালান রতন হালদার। তাঁরই মেয়ের ছেলে অভিজিৎ। রতনবাবুর কাছেই থাকে মা-ছেলেতে। অভিজিতের মা অসুস্থ, বিছানাতেই শুয়ে থাকেন। বাবা আলাদা থাকেন। কোনও খোঁজই রাখেন না স্ত্রী, সন্তানের। দাদুর কাছেই সবকিছু অভিজিতের।
মনের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে এবার সেই অভিজিৎ দেশের অন্যতম সুবিদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যাবে। দাদুও দারুণ খুশি। তিনি রতন হালদার বলেন, “আমি টুকটাক মেসে কয়লা দিই, টোটো চালাই। খুব কষ্ট করে আমি দাদুভাইকে বড় করেছি। খুব ভাল লাগছে ওর এই সাফল্যে। দাদুভাইয়ের মা শয্যাশায়ী। আমাকেই দেখাশোনা করতে হয়। ছেলেটা বড় হোক, মানুষ হোক।”
তবে চিন্তায় অভিজিৎ। বলছে, “উচ্চশিক্ষার খরচ তো অনেক। আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছি ঠিকই। তবে সেখানে খরচও প্রচুর। চাইছি সকলে আমার পাশে এসে দাঁড়াক।” ইতিমধ্যেই এলাকার চেয়ারম্যান খোঁজ নিয়েছেন, পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “গরিব পরিবারের ছেলে ও। বাবা নিরুদ্দেশ, মা অসুস্থ, দাদু টোটো চালিয়ে সংসার চালান। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ছেলেটা বড় হয়েছে, পড়াশোনা করেছে, খড়গপুর আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাই ওর সঙ্গে দেখা করতে এলাম। ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম। আর খড়গপুর যেহেতু আমার পুরনো জায়গা, ওখানে কোনও দরকারে সহযোগিতা পাবে, তাও জানিয়ে গেলাম।”
অভিজিৎ জানায়, “দিলীপবাবু এসেছিলেন। ওনার ফোন নম্বর দিয়ে গেলেন। আমাদের এখানকার যিনি চেয়ারম্যান, তিনিও খুব খুশি। উনিও আমাকে বুধবার ডেকেছেন, পাশে দাঁড়াবেন বলেছেন।” এভাবেই সকলে পাশে এসে দাঁড়াক, অন্তত পড়াশোনাটুকু যেন নির্বিঘ্নে করতে পারে, সেটাই প্রার্থনা অভিজিতের পরিবারের।
