Maldah School Hostage Case: হাতে পিস্তল, পিঠে ব্যাগভর্তি বোমা! কেন মালদহের স্কুলপড়ুয়াদের পণবন্দি করতে গেলেন এই আগন্তুক

Maldah School Hostage Case: হাতে পিস্তল, ব্যাক প্যাক ভর্তি বোমা ও আরেক হাতে পেট্রল বোমা। এক নাগাড়ে বলে যাওয়া ব্যক্তিগত জীবনের কিছু সমস্যাবন্ধ, মূলত তাঁকে স্ত্রী-পুত্রসন্তানকে খুঁজে না পাওয়ার অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ!

Maldah School Hostage Case: হাতে পিস্তল, পিঠে ব্যাগভর্তি বোমা! কেন মালদহের স্কুলপড়ুয়াদের পণবন্দি করতে গেলেন এই আগন্তুক
কে এই আগন্তুক?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 28, 2023 | 5:38 PM

মালদহ: মার্কিনমুলুক নয়, খোদ বাংলার বুকে বন্দুকবাজের দৌরাত্ম্য! পিস্তল-পেট্রল বোমা নিয়ে খুদে পড়ুয়াদের পণবন্দি করার চেষ্টা। মালদার মুচিয়ার চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের ঘটনা রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে বাংলায়। ভয়ে ধরিয়েছে রাজ্যবাসীর বুকে। দৃশ্যত এক নিতান্ত সাধারণ এক ব্যক্তি। হাতে পিস্তল, ব্যাক প্যাক ভর্তি বোমা ও আরেক হাতে পেট্রল বোমা। এক নাগাড়ে বলে যাওয়া ব্যক্তিগত জীবনের কিছু সমস্যাবন্ধ, মূলত তাঁকে স্ত্রী-পুত্রসন্তানকে খুঁজে না পাওয়ার অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ! গোটা বিষয়টা যেন একটা চিত্রনাট্যের প্লট। খুদে পড়ুয়া আর শিক্ষকের সামনে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ওই ব্যক্তি। আর তার বক্তব্যের সমর্থনে কাগজে লেখা কয়েকটা তারিখ আর ঘটনাপ্রবাহের কথা উল্লেখ করছেন। গোটা বিষয়টি ভিডিয়ো করেছেন স্কুলেরই কোনও এক কর্মী। যে ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কেউ একজন তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় সব প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন ওই ব্যক্তি! স্ত্রী সন্তানকে খুঁজে না পাওয়ার সঙ্গে স্কুলপড়ুয়াদের পণবন্দির করার চেষ্টার মধ্যে সংযোগ কোথায়? কী বলছেন ওই যুবক? যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ওই যুবক বলছেন, “টিএমসি-র পাপী ও পুলিশ প্রশাসন-ওরা মিলে আমার ছেলে আর স্ত্রীকে কিডন্যাপ করেছে। আমি নবান্নে. চিফ সেক্রেটারির কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। সেটা করেছি ৮.০৪.২০২১ তারিখে। ডিএম, এসপি,এসডি সব জায়গায় পাঠিয়েছি। তারপরও কোনও কাজ হয়নি। ২১.০৬.২০২১ সালে এসপি-কে দিয়ে অভিযোগপত্র রিসিভ করিয়েছি। তারপরও কাজ হয়নি।”

একটি চাঞ্চল্যকর দাবি করেন তিনি। একুশের সেই সময়কার কথা বলার ফাঁকেই ব্যক্তি বললেন “তারপর প্রধানের অনাস্থা হল। সেদিন আমি আমার স্ত্রীকে টিভিতে দেখতে পেয়েছি। আমি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বলেছিলাম, আমার স্ত্রী আর ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো যাবে। আমি নিজে আমার ছেলেকে সঙ্গে করে নিয়েও এসেছিলাম। পুলিশ দিলীপ হালদার ছিল, আরও অনেক পুলিশ…তৃণমূল নেতারা ছিল। ওরা আমার ছেলেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। আমি পিছন পিছন দৌড়াচ্ছি। আমার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেল।” ওই ব্যক্তি প্রশ্ন তোলেন, “যাকেই খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সে কীভাবে তৃণমূলের অনাস্থার ওখানে দেখা যাবে?” থানার তৎকালীন আইসি, এক বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ” সে সময়কার থানার আইসি, এসপি পান্ডে ব্ল্যাকমেইল করেছে ওকে, বাড়ি থেকে বার করে নিয়ে গিয়েছে।”

অর্থাৎ এই দাবি অনুযায়ী, এটা স্পষ্ট প্রশাসনের দৃষ্ট আকর্ষণ করতেই তিনি এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর আগেও ফেসবুক লাইভ করে পিস্তল কেনার অর্ডার দিয়েছেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই লিঙ্ক সব সংবাদমাধ্যমকেও দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন।

এবার প্রশ্ন মধ্য চল্লিশের এই ব্যক্তি আদতে কে? পুলিশের গ্রেফতারির পর তিনি নিজেই জানান, তাঁর নাম দেব বল্লভ। সূত্রের খবর, তিনি এলাকায় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। তাঁর স্ত্রী রীতা বল্লভ মুজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা। তিনিই সন্তানকে নিয়ে বছর দেড়েক ধরে নিখোঁজ বলে দাবি দেবের।

দেবের হাতে ছিল একটা নাইন এমএম পিস্তল, ১৬ খানা গুলি লোড করেছিলেন তাতে, বোতলে ছিল অ্যাসিড, পেট্রল। স্কুলের ব্ল্যাক বোর্ডের সামনের টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন। আর ব্যাগে আত্মঘাতী ইলেকট্রনিক বোমা! যুবক ‘থ্রেট’ দিয়ে চলেছিলেন, বলে চলেছিলেন স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজে না পাওয়ার ক্লেশ আর প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা। অত্যন্ত নির্বিকার ভাবেই। আর সামনেই প্রাণভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল খুদে পড়ুয়াগুলো। কালিয়াচকের এই স্কুলের ঘটনা সম্ভবত বাংলায় প্রথমত, যা প্রশ্ন তুলেছে একাধিক। প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। যদিও স্থানীয় পুলিশ কর্তা বলেছেন, যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক।

প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আইন নিজের হাতে নেওয়ার অধিকার কারোর নেই। কেউ আইন নিজের হাতে নেবেন না। যদি কোনও পুলিশ অফিসার ভুল করেন, তাহলে তার ওপরওয়ালা আছে। সেখানে জানান। আবার অভিযুক্তকে গণপিটুনি দেওয়াও আইনবিরুদ্ধ। এটা সমাজকেও বার্তা দিতে হবে। পুলিশকে স্বচ্ছভাবে কাজ করতে হবে।”