মালদা: রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সামনেই একই মঞ্চে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েতে চরম দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী ও এক প্রাক্তন মন্ত্রী। কাঠগড়ায় তুললেন পঞ্চায়েত প্রধানদের। নাম করেই টাকা তোলা হচ্ছে, অভিযোগ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। একই অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রও। মালদার সাহাপুরে বৃহস্পতিবার রাতে দলের সাংগঠনিক সভায় প্রকাশ্যে সাবিনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, কিছু পঞ্চায়েতে তাঁর নাম করেই টাকা তোলা হচ্ছে। চরম দুর্নীতি চলছে। সরাসরি প্রধানরা মোটা অঙ্কের টাকার দুর্নীতি করছেন। শুধু তাই নয়, দলকে বদনাম করতে কেউ কেউ আবার সরাসরি সোস্যাল মিডিয়ায় যা খুশি পোস্ট করছেন বলেও অভিযোগ তাঁর। তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে চর্চা।
একই ভাবে সরব হয়েছেন সাবিত্রী মিত্রও। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, তৃণমূলের প্রধানরা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হলে দলের পক্ষেই বিপদ। শুধু তাই নয়, একই মঞ্চে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন বৈষ্ণবনগরের বিধায়িকাও। ফিরহাদ হাকিমের সামনেই প্রকাশ্য মঞ্চে জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্বের এভাবে মুখ খোলায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি ফিরহাদ হাকিম।
সভায় প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ঠিক কী বলেছেন? তিনি বলেন, “যে সকল প্রধান, সভাপতি দলের হয়ে কাজ করছেন না, আর তাঁদের পায়ে পড়ার দরকার নেই। একটা বছর রয়েছে। সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দলের হয়ে কাজ করুন, তাঁদেরকে ছেড়ে দিন। যাঁরা এখনও শুধরোচ্ছেন না, তাঁরা এক বছরেও শুধরোবেন না। আর দলকে ভাঙিয়ে যদি কেউ মনে করেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাব, দলের ক্ষতি করব, দয়া করে চলে যাবেন। পথ খোলা আছে। আমিও এই জেলার মন্ত্রী, বিগত দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নীচু স্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু লোক আছে, যারা দলের নাম ভাঙিয়ে দলকে বদনাম করতে চান। যদি আমার নামেও কেউ কিছু বলে থাকে, যাচাই করে নিন।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন খোদ ফিরহাদ হাকিম। মঞ্চে ছিলেন কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। সভাতে নীচু স্তরের কর্মী থেকে সংগঠনের উঁচু স্তরের নেতারাও ছিলেন। এই ধরনের মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি ছড়ায় তৃণমূল শিবিরে।
যদিও এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি ফিরহাদ হাকিম। অন্যদিকে তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি বলেন, “আমাদের কোনও অস্বস্তি বাড়ছে না। কেউ যদি প্রকাশ্যেই চুরি করে, তাকে প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা করা উচিত। নিশ্চয়ই সাবিত্রী মিত্র কিংবা সাবিনার মতো সিনিয়র লিডাররা কোনও দুর্নীতি দেখতে পেয়েছেন, তাই বলেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছে দুর্নীতি হচ্ছে, এবার আমরা যদি মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখি, তাহলে তো মানুষ ক্ষমা করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো বলছেন প্রকাশ্যে দুর্নীতি হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ওই রাতে ১০.২২-এ পৌঁছেছিলেন, কিন্তু আগুন নেভাতে কি বাধা কেউ দিয়েছিলেন? ফের প্রশ্নের মুখে দমকলের ওসি