‘আমার ছেলে চোর নয়, ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওরা মেরে ফেলল’, সন্তানের শোকে পাথর মা
Mob Lynching: প্রতাপের পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।
মালদহ: নিছক সন্দেহের বশে এক যুবককে গণপ্রহারের অভিযোগ উঠল মালদহের (Maldah) হরিশচন্দ্রপুরে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। অমানবিকতা, নৃশংসতা যে এখনও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, এই ধরনের ঘটনা (Mob Lynching) তারই জানান দেয়। এই ঘটনার পর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিরাট পুলিশ বাহিনী। জানা গিয়েছে, নিহত ওই যুবক পরিযায়ী শ্রমিক।
মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের মালিওর-১ গ্রামপঞ্চায়েতের পিপুলতলা এলাকায় শুক্রবার রাতে এই গণপ্রহারের ঘটনাটি ঘটে। ওই যুবক পিপুলতলায় চুরি করতে এসেছেন, নিছক এই সন্দেহ থেকে এলাকার লোকজন তাঁকে আটকায় বলে অভিযোগ। এরপর প্রথমে দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়। এর পর পরানো হয় শিকলের শৃঙ্খল। অভিযোগ, এর পরই বেদম মারধর শুরু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই শনিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় প্রতাপ মণ্ডল নামে বছর চব্বিশের ওই যুবকের।
পুলিশ জানায়, গণপ্রহারে নিহত প্রতাপ মণ্ডল মাস খানেক আগেই ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। প্রতাপের পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। ঘটনার পর গোটা এলাকা থমথমে হয়ে রয়েছে। রবিবার মৃত যুবকের দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁর শেষকৃত্য করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে পিপুলতলা এলাকায় ঘুরছিলেন ওই যুবক। এরপরই এলাকায় চাউর হয়ে যায় চুরির উদ্দেশে তিনি ঘোরাফেরা করছেন। ছুটে আসেন এলাকাবাসী। এরপরই ওই যুবকের দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। পায়ে পরানো হয় লোহার শেকল। তারপরই শুরু হয় গণপ্রহার। বাসিন্দাদের একাংশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
এরপরই খবর পেয়ে ওই যুবকের বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। অভিযোগ, ছেলেকে মারধরের পাশাপাশি পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা পরদিন সকালেই দিতে হবে বলে লিখিয়ে নেওয়া হয়। এরপর অচেতন অবস্থায় প্রতাপকে তুলে নিয়ে প্রথমে হরিশচন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় অন্যত্র।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতাপ ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। মাস খানেক আগে বাড়িতে ফেরেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ফের তাঁর নাগপুরে ফেরার কথা ছিল। এলাকারই এক পরিযায়ী শ্রমিক বিজয় মণ্ডল বলেন, “ওর তো আমার সঙ্গেই নাগপুরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী যে হয়ে গেল!”
প্রতাপের মা সরযূ মণ্ডল বলেন, “আমার ছেলে চোর নয়। ওরা ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। আমি চাই যারা ছেলেকে খুন করেছে তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।” হরিশচন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনমাফিক পদক্ষেপ করা হবে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ গলায় কী একটা পেঁচিয়ে গেল! খপ করে হাত দিয়ে চেপে ধরলেন পুলিশ সার্জেন্ট…ক্ষতের উপর দিয়েই টলল বিপদ