কলকাতা: মালদা নার্সিংহোমকাণ্ডে গ্রেফতার তিন। গতকালই এই তিনজনকে আটক করা হয়। তবে এখনও অধরা বেসরকারি হাসপাতালের মালিক আনারুল হক ও ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষ।
গতকাল খবর করতে গিয়ে মার খেতে হয় টিভি ৯ বাংলার দুই সাংবাদিককে। সেই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই তিনজনকে। অভিযোগ, প্রথমদিকে পুলিশ অসহযোগিতা করলেও পরে উচ্চ-পদস্থ পুলিশ আধিকারিকের চাপে পড়ে তাঁরা এফআইআর নেয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত তিনজনকে প্রথমে আটক করা হয়। এরপর আজ যথেষ্ঠ প্রমাণ থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই তিনজন শুধুমাত্র উজ্জ্বল ও আনারুলের নির্দেশ পালন করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত উজ্জ্বল সাহা ও আনারুল হক এখনও অধরা।
ঠিক কী হয়েছিল?
গতকাল মালদায় ওই বেসরকারি হাসপাতালে খবর করতে গিয়ে মার খেতে হয় টিভি৯ বাংলার সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিককে। জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হয় এক প্রসূতি। সে জন্ম দেয় এক কন্যা সন্তানের। কিন্তু কুড়ি-একুশদিন কেটে গেলেও তাঁর পরিবার ও স্বামী তাঁকে না নিতে আসায় হাসপাতালের আয়ারা তাঁকে বলেন যে কন্যা সন্তানের জন্মের জন্যই স্বামী তাঁকে ছেলে চলে গিয়েছেন।
এরপর তাঁর বাড়ি পৌঁছায় টিভি ৯ বাংলার অপর এক প্রতিনিধি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যায় ওই প্রসূতির বয়ান। তিনি জানান যে, হাসপাতালের আয়ারা তাঁকে এই কথাগুলি শিখিয়ে দিয়েছিল। মহিলার বয়ান অনুযায়ী, তারা প্রথমে মালদায় সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালক ওই বেসরকারি হাসপাতালের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলেন গাড়িটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। এই নার্সিংহোমে ভর্তি করতে কারণ এখানকার পরিষেবা ভালো।
কিন্তু দিনাজপুরের দুস্থ আদিবাসী প্রসূতিকে কেন নিয়ে আসা হল মালদার ওই বেসরকারি হাসপাতালে? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়েই ঝুলি থেকে বেরিয়ে এল বিড়াল। ফাঁস হল নার্সিংহোমের কুকীর্তি।
কী কী অভিযোগ উঠছে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে?
ওই নার্সিংহোমের মালিক আনারুল হক। আর তাকে বিভিন্ন কাজে পরামর্শ দিয়ে থাকেন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দাস। অভিযোগ, আনারুল জমির দালালি করে। কাঁচা পয়সার মালিক সে।কালিয়াচকে মাফিয়া হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। কালিয়াচকে মার্বেলের ব্যবসাও শুরু করেন আনারুল। কিন্তু অল্পে মন ভরছিল না। অতএব, জালিয়াতির আরও গভীরে নিমজ্জন। ধীরে ধীরে জেলায় সিন্ডিকেটের অন্যতম মাথা হয়ে ওঠেন আনারুল। অন্যদিকে, আর এক অভিযুক্ত উজ্জ্বল দাস। একসময় ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ছিল। পরে জামিন পায়। প্রথমে চাল ব্যবসায়ী থাকলেও, এখন বিদেশে পাথর,চাল,সবজি রপ্তানি করে। এখানেও বেআইনিভাবে রপ্তানি করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, উজ্জ্বলের পরামর্শেই অ্যাম্বুলেন্স চালকরা গরীব-অসহায় পরিবারদের সরকারি হাসপাতাল বলে ভুল বুঝিয়ে এই বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে আসে। তারপর পরিবারগুলির হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় আকাশ ছোঁয়া বিল। শুধু তাই নয়, সরকারি হাসপাতালের স্ট্যাম্প নকল করে, সেই স্ট্যাম্প বিলে ছাপ মেরে তুলে দেওয়া হয় পরিবারগুলির হাতে। আর এই কাজের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকরা মোটা টাকা পেয়ে থাকেন উজ্জ্বল দাসের থেকে। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানা গিয়েছে।
এবার, এই খবর সম্প্রচার করতে গিয়ে হাসপাতালের মালিক আনারুল হক ও ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষের রোষের মুখে পড়েন টিভি ৯ বাংলার সাংবাদিক শুভোতোষ ভট্টাচার্য ও চিত্র সাংবাদিক শাম্ব সাহা। মোটা টাকায় রফা করতে চান অভিযুক্তরা টিভি ৯ বাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। ঘটনায় রীতিমতো নিন্দার ঝড় ওঠে সব মহলে। এরপর গতকাল পুলিশ আটক করে ওই তিন অভিযুক্তকে।