Adhir Chaudhury: ‘পিকে মোদীর এজেন্ট, বিজেপির পক্ষে কাজ করছেন…’

Prashant Kishore: বিতর্কের শুরু প্রশান্ত কিশোরের একটি মন্তব্য থেকে। আগামী দশকের পর দশক, ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বিজেপিই, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।

Adhir Chaudhury: 'পিকে মোদীর এজেন্ট, বিজেপির পক্ষে কাজ করছেন...'
'মোদীর এজেন্ট পিকে', কটাক্ষ অধীরের নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 03, 2021 | 1:55 PM

মুর্শিদাবাদ: বরাবরই তাঁর ‘না পসন্দ’-এর তালিকায় রয়েছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishore)। দিল্লিতে শরোদ পওয়ারের সঙ্গে পিকের বৈঠকের সময়েও সেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বুধবার ফের সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলকে আক্রমণ করার পাশাপাশি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকেও আক্রমণ করলেন অধীর (Adhir Chaudhury)।

এদিন অধীর বলেন, “পিকে আসলে কার জন্য কাজ করেন সেটা ভাল করে বুঝতে হবে। প্রশান্ত কিশোর আসলে মোদীর এজেন্ট। তিনি বিজেপির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন। আজ সেই পিকে-কেই তৃণমূলে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে এখন পিকে আর অভিষেকের ক্ষমতা বাড়ছে। ওঁরাই দলটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কংগ্রেসকে হেয় করে বিজেপিকে রোখা যাবে না, এটা বুঝে নিক তৃণমূল নেতৃত্ব। ২০২৪-এ নির্ণায়ক শক্তি আসছে।”

বিতর্কের শুরু প্রশান্ত কিশোরের একটি মন্তব্য থেকে। আগামী দশকের পর দশক, ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বিজেপিই, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। এক অনুষ্ঠানে প্রশান্ত বলেন “জিতুক হারুক ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রতেই থাকবে বিজেপি। তাঁরা যদি সর্বভারতীয় স্তরে ৩০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করে তবে রাজনীতিতে বিজেপির প্রাসঙ্গিকতা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সাধারণ মানুষের মোদীর প্রতি রাগ আছে বলে তারা মোদীকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, এই ফাঁদে দয়া করে পা দেবেন না। মানুষ যদি মোদীকে পরাজিতও করে, তাতেও বিজেপির প্রাসঙ্গিকতা আগামী কয়েক দশক অটুট থাকবে।” তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়া সফরের দিনেই প্রশান্তের এমন মন্তব্যে কার্যত ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে।

কংগ্রেস শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর সমালোচনাও করেন পিকে। তিনি জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধীর বিজেপিকে নিয়ে মূল্যায়ন ভুল ছিলেন। রাহুল বলেছিলেন মানুষ বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, এই বিশ্লেষণ সঠিক নয়। ব্যক্তিগতভাবে তীব্র বিজেপি বিরোধি হলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পিকে বরাবরই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্যে সেই পেশাদারিত্বেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তবে, ভোটকুশলীকে আগেও একাধিকবার আক্রমণ করেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। তৃণমূলের ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট’ হওয়ার সুবাদে তাঁকে ‘ঝুলনের দাদু’ বলেও কটাক্ষ করেন অধীর। তিনি দাবি করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন পিকে। তৃণমূল নেত্রী সেই স্বপ্নকেই বাস্তব মনে করছেন। শুধু তাই নয়, দিল্লিতে, শরোদ পওয়ারের বাসভবনের  বৈঠকেও দেখা যায়নি কোনও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতাকে।

সেবার, অধীর মন্তব্য করেন, “পিকে দিল্লিতে কাকে নিয়ে বৈঠক করবেন, তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কিছু নেই। ওঁ কার সঙ্গে বৈঠক করবেন তা ওঁর ব্য়াপার। প্রশান্ত কিশোর আমাদের ভাগ্যবিধাতা নন। আমাদের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এমন কোনও নির্দেশ আসেনি। শরদ পাওয়ার কী করবেন তা ওঁর ব্যাপার। সে বিষয়ে কিছু বলার নেই।” এ বার সরাসরি প্রশান্ত কিশোরকে ‘মোদীর এজেন্ট’ বলে কংগ্রেস নেতার কটাক্ষের নেপথ্য়ে যে মমতার গোয়া সফর একটা বড় কারণ, এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

শুধু বঙ্গ রাজনীতিতে নয়, জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও ক্রমেই হচ্ছে পট পরিবর্তন। বিজেপির বিরুদ্ধে ক্রমেই ‘কাছাকাছি’ আসছে অবিজেপি শক্তিশালী। সেই অবিজেপি শক্তির মধ্যে অন্যতম তৃণমূল ও কংগ্রেস। কিন্তু, বঙ্গ নির্বাচনে হোক বা উপনির্বাচনেও পরস্পরের বিরুদ্ধেও প্রার্থী দিয়েছে তারা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ”ওরা আমার বিরুদ্ধে কথা বললে কি আমি ওদের ফুল দেব!” কটাক্ষ হেনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের উক্তি, “শুধু বসে বসে টুইট করলেই হয় না, সংগঠন মজবুত করতে রাস্তায় নামতে হয়।” পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েনি কংগ্রেসও। অধীরই মন্তব্য করেন ”গোয়ায় টাকা ঢাললে বিধায়ক কিনতে পাওয়া যায়। দিদি ওখানে টাকা ঢালছেন”

প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবি আগেও সামনে এসেছে।  দলের প্রবীণ নেতারা অনেকেই পূর্বে সংগঠন ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী গোয়ার প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী ফালেইরোর উক্তি, “তৃণমূল কংগ্রেস, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, শরদ পাওয়ার কংগ্রেস, আমি চাই কংগ্রেস পরিবার একত্রিত হোক। আমার লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো। বিজেপিকে হারাতেই আমার তৃণমূলে যোগদান।”

রাজনৈতির নেতৃত্বের একাংশের মতে, সর্বভারতীয় স্তরে আসামের সুস্মিতা দেব, গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনো ফ্যালেরিওর মত কংগ্রেস নেতানেত্রীরা বিজেপি বিরোধিতায় কংগ্রেসে আস্থা রাখতে না পেরে মমতার হাত ধরেছেন। গোয়াকে কেন্দ্র করে এককভাবে তৃণমূলের এই আস্ফালনকে ভাল চোখে দেখছে না কংগ্রেস। এতে বিজেপি বিরোধিতায় বিজেপি ঐক্য ব্যাহত হচ্ছে বলেই মত কংগ্রেসর।

আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘যেদিন স্যান্ডো গেঞ্জির পকেট তৈরি হবে, সেদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন দিদিমণি’