মুর্শিদাবাদ: আরজি কর-কাণ্ডে মুখ খুললেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক মৃত অনির্বাণ দত্তের বর্তমান স্ত্রী। দোষীদের শাস্তি চেয়ে এবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলেন তিনি। সঙ্গে এই সমাজ মাধ্যমের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিলেন। মাস কয়েক আগেই মৃত্যু হয়েছে অনির্বাণ দত্তের। আর অনির্বাণ দত্তের মৃত্যুতে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল বর্তমান স্ত্রী অর্চিতা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। এখনও সে মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু সে প্রশ্ন কতটা যথাযথ, সেটাই সামনে এসে প্রশ্ন তুললেন অর্চিতা। তিনি চিকিৎসক, আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদে যখন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছিলেন, তখন তিনি হাসপাতালে আসছেন। কেন আসছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তারও উত্তর দিয়েছেন তিনি?
এবার আরজি কর কাণ্ডে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন বর্তমান স্ত্রী অর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, “আমি অর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি একজন সরকারি কর্মচারী। আমার পরিচয় আমি ডাক্তার অনির্বাণ দত্তের সদ্য বিবাহিতা বিধবা স্ত্রী। আজকে আমি হাসপাতালে এসেছি, সত্যি আমার হারানোর কিছু নেই আমি এই প্রতিবাদকে সমর্থন করছি না তা নয়, আমি সম্পূর্ণরূপে এই প্রতিবাদকে সমর্থন করি। কিন্তু হাসপাতালে এসে দুটো মানুষের মুখ দেখে অনির্বাণের যন্ত্রণাকে কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকা আমার খুব দরকার। এই জন্য আমি হাসপাতালে এসেছি, তবে দোষীরা শাস্তি পাক, এটা মন থেকে সমর্থন করি।”
দীর্ঘ পোস্টে মৃত অনির্বাণ দত্তের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সমাজের নোংরা দিকটা দেখেছেন। তাঁর কথায়, “সোশ্যাইটি আমাকে ভার্চুয়ালি গণধর্ষণ করেছে। আমার পরিবারকে রাস্তায় নোংরামির পথে নামিয়েছে। আমি সমাজের জঘন্য রূপ দেখেছি।”
চিকিৎসক জানিয়েছেন. অনির্বাণের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ২০২২ সালে। ২০২০ সালে অনির্বাণ তাঁর প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। তাঁদের এক সন্তানও রয়েছে। বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল অনির্বাণের। তাঁর ব্রেজ ড্রিঙ্কিংয়ের অভ্যাস ছিল। প্রতি মাসে তিন চার বার করে তখন ব্রেজ ড্রিঙ্কিং করতেন। তখন তিন তার দিন ধরে নক আউট থাকতেন। এরপর অনির্বাণের স্ত্রী এই বিষয়টি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা দুজনে চেষ্টা করে এই বাইপোলার ডিসঅর্ডার অনেকটাই সারিয়ে তুলেছিলাম। যেটা আগে এক মাসেই তিন-চার বার হত, সেটা পরে দুমাসে, পরে চার মাসে, ছ’মাসে, আট মাসে হয়। লাস্ট এপিসোডটা ৯ মাস পরে হয়েছিল। আমার ওর কাছে কিছুই পাওয়ার ছিল না, ভালবাসা ছাড়া। একটা এক্সপেকটেশন ছিল, সুন্দর সংসার হবে। ”
ঘটনার আগের রাতের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। মৃত্যুর আগের দিন অনির্বাণের স্ত্রীর ২৪ ঘণ্টা ডিউটি পড়েছিল। আগের সন্ধ্যা থেকেই মদ্যপান শুরু করেছিলেন অনির্বাণ। সে কথা স্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু স্ত্রীর ২৪ ঘণ্টা ডিউটি পড়েছিল, তিনি ফেরত আসতে পারেননি। ততক্ষণ তিনি মদ্যপান করেছিলেন। পরেরদিন সকালে বহরমপুরের সমস্ত হোটেল খুঁজেছিলেন স্ত্রী। রাতে রানিবাগানের একটি হোটেলে রয়েছে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসেন স্ত্রী। সেখানে আট খানা মদের বোতল পান। বাড়িতে ফিরে তিনি ঘরে মাটিতেই শুয়েছিলেন। মদ্যপানের পর তিনি মাটিতেই প্রতিবার শুতেন। রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত জেগেছিলেন। তারপর স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে উঠেই দেখেন অনির্বাণের শরীর নিথর।
তিনি বলেন, “এই সমাজের কাছ থেকে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। তবে আমি চাই আরজি কর কাণ্ডে দোষীরা শাস্তি পাক।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)