মুর্শিদাবাদ: ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে কান্দিতে তৃণমূল নেতা খুুনে পুলিশের জালে ৪ দুষ্কৃতী। শুক্রবার রাতে ‘খুন’ হন তৃণমূল নেতা (TMC Leader) নেপাল সাহা। কিন্তু, খুনের ঘটনায় পরে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অবশেষে, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে ৪৮ ঘণ্টা পর চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কান্দি থানার পুলিশ জানিয়েছে, যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁরা হলেন তারকনাথ সাহা, বরুণ ঘোষ, বিষ্ণু দলুই ও সপ্তম ঘোষ। শনিবার রাতে বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে ওই চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে তিনজন আন্দুলিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সপ্তম ঘোষ কান্দি থানার রূপপুরের বাসিন্দা। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১২০বি, ২৫ ও ২৭ নম্বর ধারায় মামলা করা রুজু হয়েছে। রবিবার, ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন চেয়ে কান্দি মহকুমা আদালতে ধৃতদের পেশ করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কান্দি থানার অন্তর্গত সন্তোষপুর এলাকার নেপাল সাহা নামে এক তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। নেপথ্যে উঠে আসে তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা।
ঠিক কী অভিযোগ? মৃতের পরিজন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকাতেই একটি রেশনের দোকান রয়েছে ওই তৃণমূল নেতার। শুক্রবার সন্ধেয় নিজের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন নেপালবাবু। সেইসময় আচমকা কিছু দুষ্কৃতী পেছন থেকে এসে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ। সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন নেপালবাবু। স্থানীয়রা চিত্কার শুনতে পেয়ে ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তৃণমূল নেতার মৃত্যুর খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় কান্দি থানার পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এই ঘটনায় কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করেই এই ঘটনা ঘটেছে।
কান্দিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কোনও ঘটনা নয়। গত মাসেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যকে বোমা মারা ঘটনায় অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীরই বিরুদ্ধে। বোমার আঘাতে জখম হন তৃণমূল নেতা বাবর আলি। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তৃণমূল কর্মীর শাহজাহানই এই কাজ করেছে বলে দাবি করেন বাবর। বাবরের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তাঁকে সরিয়ে পঞ্চায়েত সদস্য হওয়াই শাহজাহানের মূল উদ্দেশ্য। সেই থেকে হামলা।
তৃণমূল নেতা নেপাল সাহার ভাইপোর কথায়, “আজ সন্ধ্যাবেলা আচমকা আমার কাছে পার্টির লোকেরা ফোন করে বলে, ‘তুই কোথায়, তোর কাকাকে তো মার্ডার করে ফেলল!’ আমি তখন বাড়ি থেকে বেরচ্ছি। শোনার পর আকাশ থেকে পড়লাম। আমি জানি এটা ওই বরুণ সাহাদের কীর্তি। আমরা বরাবর তৃণমূল করে এসেছি। ওরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছে। তাই ওরা আমাদের পছন্দ করে না। সেই থেকে ঝামেলা শুরু করেছে। আজ আমার কাকাকে খুনই করে দিল।”
স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়,”নেপালবাবু আগে আমাদের অঞ্চল সভাপতিও ছিলেন। তাঁর স্ত্রী আমাদের এখানে পঞ্চায়েতের সদস্য। দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওঁকে কোপ মারা হয়। তবে কে বা কারা মেরেছে এবং কেন মেরেছে তা স্পষ্ট নয়। আমরা চাই, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক। কেন কেউ নেপালবাবুকে মারবে এটাই বুঝতে পারছি না আমরা।”
আরও পড়ুন: Siliguri Munucipal Election: ‘আমরা কখনও জিতিনি…জয় পেতে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে’