Siliguri Munucipal Election: ‘আমরা কখনও জিতিনি…জয় পেতে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে’
Gautam Deb: নদিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী দলের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন, সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। কোনওভাবে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করা যাবে না। সরাসরি সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিশানা করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
শিলিগুড়ি: আগামী ফেব্রুয়ারি- মার্চ মাসেই শিলিগুড়িতেও পুরভোট (Siliguri Municipality) হওয়ার সম্ভাবনা। প্রশাসনিক বৈঠক থেকেও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে এই মুহূর্তে নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় রাজ্যের সরকার মনোনীত শাসক দলের নেতারা প্রশাসক বোর্ড চালাচ্ছেন। কিন্তু, পুরভোটে কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে এখন থেকেই জোর সরগরম। দলের কর্মীদের উদ্দেশে তাই কড়া বার্তা দিলেন শিলিগুড়ির প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান গৌতম দেব (Gautam Deb)।
শুক্রবার গৌতম বলেন, “আমাদের দল বড় দল। তাই টিকিট প্রত্যাশীও বেশি। যাঁরা সক্রিয় রাজনীতি করেন তাঁদের এই দাবি থাকাও যুক্তিযুক্ত। কিন্তু দল যাঁকে টিকিট দেবে তিনিই প্রার্থী হবেন। সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সেই বার্তায় দিয়েছেন। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। মতবিরোধ থাকবেই। কিন্তু, দলকে যেন তার জন্য ভুগতে না হয়।”
বর্ষীয়ান নেতার আরও সংযোজন, “আমরা এখানে কখনও জিতিনি। তাই দলীয় কর্মীদের বলছি, জিততে হলে দলের শৃঙ্খলা ও নির্দেশ মানতে হবে। জোর জদবরদস্তি করে নির্বাচন হয় না। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক। শিলিগুড়ির ৪৭ টি ওয়ার্ডে মহিলা প্রার্থীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে ও নতুন মুখ সামনে আনা হবে।”
প্রসঙ্গত, নদিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী দলের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন, সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। কোনওভাবে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করা যাবে না। সরাসরি সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিশানা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর, সেই বার্তাকেই কার্যত কড়াভাবেই পালন করতে বদ্ধ পরিকর ঘাসফুল।
শিলিগুড়ি পুরসভাতে বরাবরই একচ্ছত্র ক্ষমতায় বিরাজ করেছে বাম শিবির। বিধানসভা নির্বাচনেও শিলিগুড়ির ক্ষমতা গিয়েছে বিজেপির হাতে। লোকসভাতেও পেছনের দিকেই তৃণমূল। শুধু তাই নয়, সেইভাবে হিসেব করলে দেখা যাবে, গোটা উত্তরবঙ্গতেই বেশ পিছিয়ে রয়েছে ঘাসফুল শিবির। এই পরিস্থিতিতে পুরভোটেও যদি দলের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে, তা আদপেই নির্বাচনে জয়লাভের পক্ষে ইতিবাচক নয় বলেই মনে করছেন শাসক নেতৃত্বের একাংশ।
মাঝেমধ্যেই দেখা গিয়েছে, প্রার্থীপদ না পেলেই নির্দল হয়ে বা গোঁজ প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়তে চাইছেন দলের কর্মীরা। বনগাঁয় যেরকম সম্প্রতি নজরে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। অন্যদিকে, কলকাতায় ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির তরফে প্রার্থী হতে না পেরে নির্দল হয়ে লড়ছেন প্রয়াত কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের স্বামী গৌরব বিশ্বাস। এইভাবে, নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করলে তা সার্বিকভাবে দলের জন্য ক্ষতি হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। এ প্রসঙ্গে, গৌতম দেবের মন্তব্য, “এই ধরনের নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেই থাকে। তবে এই ঘটনাগুলিকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। দলের শৃঙ্খলা মেনেই কাজ করতে হবে।” তবে প্রার্থী তালিকায় কারা রয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি। সূত্রের খবর, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, শিলিগুড়ি পুরপ্রশাসনকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই পরিচালন কমিটি তৈরি করেছে বিজেপি। সেই কমিটি পরিচালনের মাথায় রয়েছেন বিধায়কেরা। সেদিক থেকে তৃণমূলের তরফে এখনও এমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, পৌর পরিষেবা নিয়ে মানুষের নানা ক্ষোভ প্রশমনে এবার সরাসরি প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেবকে ফোন করেই নাগরিক পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানানোর বন্দোবস্তের ঘোষণা করেছে তৃণমূল (TMC)। শিলিগুড়ি পুরসভা বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব জানান, নতুন উদ্যোগ শুরুর কথা। যার নাম ‘কল টু চেয়ারম্যান’। এর আগে এমন উদ্যোগ অবশ্য কলকাতা পুরসভায় দেখা গিয়েছে। কিছুদিন আগে হাওড়াতেও শুরু হয়েছে। এদিকে গৌতম দেব জানান, প্রতি শনিবার সকালে সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারোটা একটি টোল ফ্রি নাম্বারে এই ফোন করলে তাঁকে পাওয়া যাবে। সরাসরি তাঁকে সমস্যা, অভাব-অভিযোগের কথা বলতে পারবেন নাগরিকরা। তাঁর কথায়, “আমার সঙ্গে পৌরসভার সমস্ত আধিকারিকেরাও সেই সময়ে হাজির থাকবেন। ফোন কলে আসা অভিযোগের চটজলদি সমাধান মিলবে।”
কিন্তু ঠিক ভোটের মুখে এহেন উদ্যোগ কেন? গৌতম দেবের জবাব, “এর কৈফিয়ত তিনি সংবাদমাধ্যমকে দেব না। বহু মানুষ সরাসরি কথা বলতে চান। বহু মানুষ যোগাযোগ করতে চেয়েও আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তাঁদের কাছে পৌছতেই এই উদ্যোগ।” তাই ১৮০০৩৪৫৩৩৫০ এই নম্বরে বিনামূল্যে ফোন কল করে অভিযোগ জানানো যাবে।
যদিও এ নিয়ে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, হেরে যাওয়া নেতারা গায়ের জোরে প্রশাসক পদে বসে আছেন। তিনি বলেন,”উনি কি চেয়ারম্যান নাকি? আগে জিতে আসুন। রোজ মানুষকে পরিষেবা পেতে নাকাল হতে হচ্ছে। এখন ভোটের আগে লোক দেখানো প্রকল্প করা হচ্ছে!” এর আগেও একাধিকবার শিলিগুড়ি পুরসভার পরিষেবা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এদিন ফের তৃণমূলকে কটাক্ষ ছোড়েন তিনি।
অন্যদিকে বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ বলেন, “নির্বাচন হলেই এই চেয়ারম্যান পালটে যাবে। ভোটের মুখে লোকের ক্ষোভ বুঝেই এসব চালাকি করার চেষ্টা হচ্ছে। নানা সার্টিফিকেট পেতে, পরিষেবা পেতে হয়রানি হচ্ছে। আর গায়ের জোরে ভোট না করিয়ে ওই হেরে যাওয়া নেতারা প্রশাসক পদে বসে নীলবাতির গাড়ি নিয়ে ঘুরছেন!” সব মিলিয়ে ভোটের আগে গৌতম দেবের এই উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চাপানউতোর।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘খুব পাকামি না, প্রথমেই টয়ট্রেন চাই!’, প্রশাসনিক বৈঠকে বেজায় চটলেন মুখ্যমন্ত্রী