সিংহ হৃদয়: লকডাউনে কর্মহীন রিকশা চালকদের পুরো বেতন দান সিভিক ভলান্টিয়ারের
"আমার বাবা ও ভাইয়ের তো কিছু রোজগার রয়েছে। কোনওভাবে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এঁদের কিছু সাহায্য করতে পারার আনন্দটাই অন্যরকম।''
নদিয়া: ক্ষমতা সীমিত কিন্তু সিংহ হৃদয়। করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়াতে রাজ্যে শুরু হয়েছে কার্যত লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে নিজের একমাসের বেতন দিয়ে কর্মহীন রিকশা চালকদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেন নবদ্বীপের এক সিভিক ভলান্টিয়ার।
নবদ্বীপ থানার স্বরূপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেশগঞ্জ কানাইনগর এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ পাল। কাজ করেন সিভিক ভলান্টিয়ারের। নবদ্বীপ শহরের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলা মোড় এলাকায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন তিনি। সেখানেই প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন রিকশা চালক যাত্রী পরিবহণের কাজ করেন। কিন্তু রাজ্যে কার্যত লকডাউনের পর এই দিন আনা খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন মহা বিপদ। পরিবারের ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে বেগ পাচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন সিভিক ভলান্টিয়ার প্রসেনজিৎ।
নিজের রোজগার সীমিত। কিন্তু সেখান থেকেই রিকশা চালকদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন এই সিভিক ভলান্টিয়ার। মাস মাইনের সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করে পঁয়তাল্লিশ জন কর্মহীন রিকশা চালককে চাল-ডাল, তেল-নুন-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেন তিনি।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সারা রাজ্যে কার্যত লকডাউনের নির্দেশ জারি করেছে সরকার। যার ফলে শহরের ব্যস্ততম এলাকা পোড়ামা তলা রিক্সা স্ট্যান্ডের রিকশা চালকেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। করোনা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত তো রাখছেন কিন্তু দু’বেলা খাবেন কী, এটাই তাঁদের চিন্তা। সেই দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে নিজের মাইনের পুরো টাকা তাঁদের হাতে সঁপে দিলেন যিনি, তাঁর নিজের বাড়িতেও আর্থিক অনটন রয়েছে। তবে প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, “আমার বাবা ও ভাইয়ের তো কিছু রোজগার রয়েছে। কোনওভাবে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এঁদের কিছু সাহায্য করতে পারার আনন্দটাই অন্যরকম।”
আরও পড়ুন: বাবা-মা করোনা আক্রান্ত, রেড ভলান্টিয়ার্সের সঙ্গে কাজে ব্যস্ত পাঁচ বছরের গোলু
এদিন দুপুরে রিকশা চালকদের হাতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন নবদ্বীপ থানার কর্মরত এই সিভিক ভলান্টিয়ার। লাইন দিয়ে তাঁরা এই খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করেন। প্রসেনজিতের এই মানবিক উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছে তামাম নবদ্বীপবাসী। প্রসেনজিৎ যেন দেখিয়ে দিলেন, ক্ষমতা যাই হোক না কেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থাকা দরকার।