নদিয়া: মেটিয়ার পর এবার নদিয়ার হাঁসখালি। জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ। ধর্ষণের পর নাবালিকাকে বাড়িতে ফেলেই চম্পট। মাঝরাতে মৃত্যু নির্যাতিতার। কাঠগড়ায় এলাকার তৃণমূল নেতার ছেলে। বিভৎস, ভয়ঙ্করকাণ্ড নদিয়ার হাঁসখালিতে। অভিযোগ রয়েছে আরও বড়, মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি ওই নাবালিকার দেহ দাহ করতে বাধ্য করা হয় পরিবারকে। পাড়াপড়শি ডেকে জোর জবরদস্তি দেহ দাহ করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটা গত সোমবারের। এলাকার এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল ওই নাবালিকা। পুলিশের কাছে দেওয়া নির্যাতিতার পরিবারের বয়ান অনুযায়ী, বিকাল চারটে নাগাদ বন্ধুর বাড়িতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হয় সে। তারপর সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এক মহিলার সঙ্গে বাড়িতে আসে ওই নাবালিকা। তারপরই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে ওই মহিলা মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বলে যান, যাতে তাকে নার্সিংহোম কিংবা প্রাইভেট চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। ততক্ষণে তলপেটের ব্যথায় কার্যত অচৈতন্য হয়ে পড়তে থাকে ওই নাবালিকা। পরে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, নাবালিকার অবস্থা সঙ্কটজনক। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই তার একমাত্র কারণ। গোটা বিষয়টি পরিবারের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই নাবালিকাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রাতেই মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, অদ্ভূতভাবে বাড়িতে হাজির হয়ে যান পাড়ার কয়েকজন ছেলে। তাঁরা কীভাবে খবর পেলেন, সেটাও স্পষ্ট নয় নির্যাতিতার বাড়ির লোকের কাছে। মেয়ের আকস্মিক পরিণতিতে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন বাবা-মা। মাথা কাজ করছিল না কিছু। সেসময় পাড়ার ছেলেরাই সাহায্যের নামে তৎপরতার সঙ্গে নাবালিকার সৎকার্য করাতে উদ্যত হন। অভিযোগ, তাঁরাই দেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেন। নাবালিকার বাড়ির হাফ কিলোমিটারের মধ্যে এক শ্মশান। সেখানেই কোনও ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া দাহ করা হয় দেহ। এমনকি আগুন নিভিতে দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয় ছাইও। ঘটনার রাতেই শ্মশানের ওই এলাকা পুরো সাফ!
ঘটনার কথা কাউকে কিছু বললে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। শেষমেশ রবিবার সাহস জুড়িয়ে চাইল্ড লাইনে ও হাঁসখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার মা। ঘটনার পরই আটক করা হয় অভিযুক্তকে। গ্রেফতার করা হয়নি কাউকেই।
নির্যাতিতার মা বলেন, “সোমবার চারটের সময়ে গিয়েছিল। সাতটা নাগাদ এসেছিল। একটা মেয়ে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে এসে আমার মেয়েকে দিয়ে যায়। বলেছিল, আমার মেয়ের নাকি মাথা ঘুরে গিয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে নিও। বাড়াবাড়ি করলে বাড়ি জ্বালিয়ে দেব।”
প্রশ্ন উঠছে যে বিষয়গুলোতে
♦ মঙ্গলবার ভোররাতে মৃত্যু, দাহ করল কারা?
♦ তথ্য লোপাট করতেই কি তড়িঘড়ি দাহ?
♦ নাবালিকার ডেথ সার্টিফিকেট কোথায়?
♦ মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু, শনিবার কেন লিখিত অভিযোগ?
♦ কেন এখনও FIR করল না পুলিশ? তবে কি তদন্তের নামে সময় নষ্ট করার কৌশল?
♦ কেন এখনও নাগালের বাইরে অভিযুক্ত? শাসকনেতার ছেলে বলেই কি ছাড়?
♦ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।
হাতে টাটকা ইস্যু। আর তা নিয়ে সরব প্রতিপক্ষও। বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কী যে বলব বুঝতে পারছি না। এবার তো রাজ্যের নাম পাল্টে দিতে হবে। ধর্ষণ, গোলা-বন্দুক-খুন-বঙ্গ, এরকম করে দিলে হয় একটা। বাংলার মানুষকে কতটা হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেটা বলতে পারছি না।”
বিজেপি বিধায়ক আশিস বিশ্বাস বলেন, “ভয় দেখানো হয়েছে। মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রাজ্যে শাসন ব্যবস্থা নেই। কোনওরকমভাবে সরকার আইন শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারছে না।” কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা নিত্য ঘটছে। শাস্তি হচ্ছে কই। এখন পরিবারের সদস্যদের কাউকে চাকরি দেবে, ভয় দেখাবে। এটাই হবে। শাসকদলের অভ্যন্তরে এখন মুষলপর্ব চলছে।”
আরও পড়ুন: TMC Party Office: তৃণমূলের পার্টি অফিসে ‘মেয়ে নিয়ে আড্ডা, মদ-জুয়ার আসর’, বিস্ফোরক দলেরই কাউন্সিলর