নদিয়া: দেরিতে হলেও এবার হাঁসখালির ‘গণধর্ষণ’কাণ্ডে তৎপর পুলিশ। মৃত নির্যাতিতা কিশোরীর মা ও শ্মশানের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, (যে শ্মশানে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দাহ করা হয়েছিল কিশোরীর দেহ) তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনার রাতে অর্থাৎ সোমবার রাত ন’টা নাগাদ স্থানীয় এলাকায় যে চিকিৎসকের থেকে ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন নির্যাতিতার মা, ডাক পড়েছে তাঁরও। সেই চিকিৎসকরেও গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। খতিয়ে দেখা হবে তাঁর ভূমিকাও। সোমবারই তাঁদের রানাঘাট আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।
শ্মশান কর্তৃপক্ষের ভূমিকা মারাত্মক
এক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন শ্মশান কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও অত্যন্ত সন্দেহজনক। নির্যাতিতার মায়ের বয়ান অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোর রাতে যখন তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়, তখন পাড়ার কয়েকজন ছেলে তাঁদের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। । তাঁরা কীভাবে খবর পেলেন, সেটাও স্পষ্ট নয় নির্যাতিতার বাড়ির লোকের কাছে। মেয়ের আকস্মিক পরিণতিতে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন বাবা-মা। মাথা কাজ করছিল না কিছু। সেসময় পাড়ার ছেলেরাই সাহায্যের নামে তৎপরতার সঙ্গে নাবালিকার সৎকার্য করাতে উদ্যত হন। অভিযোগ, তাঁরাই দেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেন। নাবালিকার বাড়ির হাফ কিলোমিটারের মধ্যে এক শ্মশান। সেখানেই কোনও ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া দাহ করা হয় দেহ। এমনকি আগুন নিভিতে দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয় ছাইও। ঘটনার রাতেই শ্মশানের ওই এলাকা পুরো সাফ! রবিবার সকালে শ্মাশানে গিয়ে কারোরই দেখা মেলেনি। শ্মশান কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি। এবার তাঁরই ডাক পড়েছে।
প্রশ্নের মুখে চিকিৎসকের ভূমিকা
অন্যদিকে, রবিবার রাতে মেয়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সময়ে যে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা, তাঁর সঙ্গেও কথা বলতে চান তদন্তকারীরা। পুলিশের অনুমান, চিকিৎসক নিশ্চয় রোগী দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কী হয়েছে। তারপরও তিনি কেন রোগীকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন, কেন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেননি। কেন পুলিশকেও বা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গোটা বিষয়টি জানাননি। সেই চিকিৎসকেরও ভূমিকা খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।
রবিবার রাত থেকেই হাঁসখালি জুড়ে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ছেলে। তাকে রবিবারই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ‘গণধর্ষণে’র ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে আরও অনেকে। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় এলাকায় তল্লাশি। রবিবার রাতেই আরও বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসডিপিও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও রানাঘাট পুলিশ সুপার এলাকা পরিদর্শন করেন সকালে। পুলিশ সুপার সায়ক দাস দফায় দফায় অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। রাতভর জেরা চলেছে প্রধান অভিযুক্তকে। তার থেকেই বেশ কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। যারা ওই রাতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বার্থ ডে পার্টিতে ছিল।
অন্যদিকে, এই ইস্যুতে হাঁসখালিতে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির মহিলা প্রতিনিধি দল সোমবার নির্যাতিতার বাড়িতে যাবে। সঙ্গে বিজেপির বিধায়কও থাকবেন।
আরও পড়ুন: TMC Party Office: তৃণমূলের পার্টি অফিসে ‘মেয়ে নিয়ে আড্ডা, মদ-জুয়ার আসর’, বিস্ফোরক দলেরই কাউন্সিলর