নদিয়া: এক-দুটো নয়, ১১টি কুকুরকে কীটনাশক খাইয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ। মর্মান্তিক ঘটনা চাপড়া থানার বহিরগাছি এলাকায়। অভিযোগ, ওই এলাকার স্থানীয় দুই যুবক খাবারের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়ে কুকুরদের খুন করেছে। ঘটনায় স্থানীয় এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে চাপড়া থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম হরজত বিশ্বাস ও মিঞা বিশ্বাস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেই ওই এলাকায় এক শিশুকে একটি কুকুর কামড়ে দেয়। তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। বহিরগাছি এলাকায় কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করছিল। অনেকক্ষেত্রেই পাড়ার বাইরের কেউ কোনও কাজে এলে, কুকুর তাড়া করত। এমনকি ওই এলাকায় ঢুকে পারত না কোনও ডেলিভারি বয়ও। স্থানীয়দের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল। আর তাতে ঘৃতাহুতির কাজ করে শিশুকে কুকুরের কামড়।
মঙ্গলবার সকালে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল বহিরগাছির বাসিন্দারা। এলাকারই ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কুকুরের দেহ। কয়েকটি খুদের দেহও রয়েছে ঝোপের মধ্যে পড়ে। কয়েক জনের গায়ে রয়েছে আবার গভীর ক্ষত। বেশিরভাগেরই মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে গিয়েছে। শরীরে সার নেই কারোরই।
একসঙ্গে ১১ টি কুকুরের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। কার নৃশংসতার শিকার হয়েছে কুকুরগুলি, তা নিয়ে তৈরি হতে থাকে গুঞ্জন। এরই মধ্যে চাপড়া থানায় গিয়ে স্থানীয় এক মহিলা হরজত ও মিঞার নামে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু প্রশ্ন, এত প্রতিবেশী থাকতে কেবল তাঁদের ওপরেই কেন সন্দেহ পড়ল মহিলার? জানা যাচ্ছে, এলাকায় কয়েকদিন আগেই এক শিশুকে কামড়ে দেয় একটি কুকুর। তা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। তখনই অভিযুক্তরা কুকুরগুলোকে পিটিয়ে খুন করে দেবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। এর কয়েক দিনের ব্যবধানেই এই ঘটনা। তাতেই তাঁদের ওপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে মহিলার।
মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে চাপড়া থানার পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এলাকায় কুকুর বাড়ছিল। তবে বাচ্চা কুকুরগুলো তো পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াত, মায়া পড়ে গিয়েছিল। এমনটা কেউ করে ফেলতে পারে, ভাবতেও পারছি না।”
অভিযোগকারিনীর বক্তব্য, “আমরা কুকুরগুলো খেতে দিতাম। ওরা গেটের বাইরে থেকে মুখ বাড়িয়ে রাখত। কিছুদিন আগেই একটা কুকুরের বাচ্চা হয়। বাচ্চা কুকুরটাকে ধরতে যাওয়াতেই কামড়ে দিয়েছিল মা কুকুরটা। তাই নিয়ে অশান্তিও হয়। তারপর ওরা বাঁশ গিয়ে কুকুরগুলোকে কয়েকটি পিটিয়ে বেড়াত। এরপর তো বিষ দিয়ে মেরেই দিল।”
এই ঘটনার ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে চাপড়া থানার পুলিশ। ধৃতদের আজ আদালতে পেশ করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এরকমই এক নৃশংস ঘটনা ঘটে এনআরএস চত্বরে। পিটিয়ে খুন করা হয় ১৬টি কুকুরে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, এমনভাবে কুকুরগুলো পেটানো হয়েছিল, যার ফলে ফেটে গিয়েছিল যকৃৎ। আরও একবার সেই নৃশংসতার সাক্ষী থাকল বহিরাগাছা এলাকা।
আরও পড়ুন: Madarihat Murder: মাদারিহাটে বাড়িতে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি! নিহত ২