ধেয়ে আসছে ‘ইয়াস’, পাশে থাকবেন তিনি, গ্রামবাসীদের অভয়বার্তা দিলেন কাঁথির ‘ভূমিপুত্র’ শুভেন্দু
বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, "গত বছর আমফানে নন্দীগ্রাম-সহ সর্বত্র ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডব মিটে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। জলঘোলা হয়েছে। ইয়াসের ক্ষেত্রে তা হতে দেওয়া চলবে। এ বারে, আমি নিজে গ্রামবাসীদের সঙ্গে থাকব। আমার কর্মীদেরও অনুরোধ করব তাঁরা এই দুঃসময়ে পাশে থাকুন।"
পূর্ব মেদিনীপুর: বঙ্গ নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিজেপির তরফে প্রার্থী হয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ফোটোফিনিশে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে তিনি যে একজন বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, এমনকী নিজের একটি জনভিত্তি প্রস্তুত করতে সক্ষম, তাও প্রমাণ করে ছেড়েছেন। তিনি অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে, কাঁথির ‘ভূমিপুত্র’, শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কিন্তু, তাঁর দলত্যাগের পর থেকেই কাঁথিতে অধিকারীদের ক্ষমতা খর্ব করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। অধিকারী পরিবারের অধিকার খর্ব করতে একাধিক প্রশাসনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এই পরিবারের বাকি সদস্যদের। কিন্তু, তারপরেও যে পূর্ব মেদিনীপুর ‘অধিকারী গড়’ তা ফের বুঝিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসের’ ভয়াল তাণ্ডবের আঁচ পেয়েই রবিবার দলের কর্মীদের সঙ্গে নন্দীগ্রামের (Nandigram) ভাঙাবেড়ার অতিথি নিবাসে জরুরি বৈঠক সারলেন বিজেপি বিধায়ক।
এদিন, বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, “গত বছর আমফানে নন্দীগ্রাম-সহ সর্বত্র ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডব মিটে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। জলঘোলা হয়েছে। ইয়াসের ক্ষেত্রে তা হতে দেওয়া চলবে। এ বারে, আমি নিজে গ্রামবাসীদের সঙ্গে থাকব। আমার কর্মীদেরও অনুরোধ করব তাঁরা এই দুঃসময়ে পাশে থাকুন। একমাত্র সমন্বয় সাধনের মাধ্যমেই আমরা ইয়াসের মোকাবিলা করতে পারি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য় এখন থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা কাজ করছেন। উপকূলবর্তী গ্রামবাসীদের সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” ঝড়ের পরবর্তী সময়ে, গ্রামবাসীদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনো, বন্টন ও সরবরাহ করা এবং তা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না সেই সব দিকে কড়া নজর রাখার কথাও বলেন শুভেন্দু। এদিন গ্রামবাসীদের উদ্দেশে, অধিকারী পুত্র বলেন, “আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি। বিশেষ করে যাঁরা আপনারা রাজনৈতিক হিংসার শিকার, দুর্নীতির শিকার, জানবেন আমি তাঁদের পাশে সবসময় ছিলাম। আছি। থাকব।”
ক্রমশই শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ (Yaas)। আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সকালে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। রবিবার এটি মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর, ইয়াস উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগোবে। সোমবার, ২৪ ঘণ্টায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর ফের উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে ইয়াস। বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে পৌঁছবে এই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় (Cyclone Yaas)।
মৌসম ভবন (IMD) সূত্রে খবর, এই ঝড়ের প্রভাবে বাংলা জুড়ে বৃষ্টিপাত হবে। তবে, শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, প্রভাবিত হবে উত্তরবঙ্গও। একদিকে গঙ্গা তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বৃষ্টিপাত শুরু হবে ২৫ মে থেকে। ২৪ ঘণ্টা ধরে চলবে ব্যাপক বৃষ্টির দাপট। অন্য দিকে, হিমালয় ঘেঁষা এলাকাতেও বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন (IMD)। ২৬ তারিখে সেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। শুক্রবারই বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ইয়াস-মোকাবিলায় বৈঠক করেছেন। যেহেতু দক্ষিণবঙ্গে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি, তাই দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, বিধান নগর ও মেদিনীপুরে আগে থেকে দফতরের বিশেষ দল থাকবে। ২৫-৩০ জনের একটি দল তৈরি করা হবে। জেলায় জেলায় বাতিস্তম্ভ পাঠানোর পাশাপাশি ২৫ মে থেকেই কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। সেখানে থাকবেন খোদ মন্ত্রী। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়লে গত আড়াই বছরে এটা হবে তৃতীয় ঝড়। ২০১৯-এর শেষে বুলবুল, ২০২০-তে আমফান আছড়ে পড়ার ফের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। এমন ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: বিজেপি বিধায়ক শীতল কাপাটকে দেখতে হাসপাতালে হাজির শুভেন্দু, কথা বললেন থানাতেও