উত্তর ২৪ পরগনা: লক্ষ্মীপুজোর দিনেই ‘অর্জুন-গড়ে’ আচমকা বিস্ফোরণ (Blast)। ব্যারাকপুরে সেই বিস্ফোরণের ঘটনায় আগেই তেলেগুভাষী দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ বার, সেই বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তে সিআইডি ও ফরেনসিক দল। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, ওই দম্পতির ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে ইথার, অ্যালকোহল উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে পচা আপেলও।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃতরা কেউই এখনও স্পষ্ট করে মুখ খোলেননি। তবে জেরায় এষা স্বীকার করেছেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে মাদক সেবন করতেন। তাঁদের ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে গাঁজাও উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বোমা তৈরির মশলাও। আপেল পচিয়ে ইথার ও অ্যালকোহলোর সঙ্গে কোনওভাবে কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে গিয়েই বিস্ফোরণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু, কেন আপেলের ব্যবহার তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কী ধরনের রাসায়নিক পরীক্ষা হয়েছিল তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুজোর দুপুরে আচমকা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। আওয়াজ শুনেই সকলে বেরিয়ে আসেন। যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে, সে বাড়ির মালিক এলাকায় থাকেন না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাড়িতে ছিলেন ভাড়াটে। একটা ঘরে থাকতেন এক দম্পতি। পাশের ঘরে থাকতেন এক প্রৌঢ়। বিস্ফোরণের আওয়াজ আসে ওই দম্পতির ঘর থেকেই। বিস্ফোরণের জেরেই দেওয়াল থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ে আহত হন ইসাইয়া ফেনিহাস নামে বছর ৫৪-র এক প্রৌঢ়। অন্য়দিকে, যে ঘরে বিস্ফোরণ হয়, সেখানে থাকতেন রাজ মল্লিক ও এষা গিডলা। বিস্ফোরণের জেরে রাজ গুরুতর আহত হন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ব্যারাকপুর থানার পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, কোনও বিশেষ ধরনের রাসায়নিক নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়েই এই বিপত্তি। তবে কোন ধরনের রাসায়নিক কেনই বা তা ব্যবহার করা হচ্ছিল, কী কারণে এই পরীক্ষা সবটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই রাজু মল্লিক ও এষা গিডলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রাজু মল্লিক চিকিত্সাধীন হওয়ায় এষাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে তিনি তেলেগুভাষী হওয়ায় প্রথমে জেরায় বেশ কিছুটা অসুবিধায় পড়েন তদন্তকারীরা। পরে একজন তেলেগুভাষীকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরও জানা গিয়েছে, এষা ও রাজের ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক ও গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। তাঁরা যে মাদক সেবন করতেন তা জেরায় স্বীকার করেছেন এষা। পাশাপাশি, এষাদের সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকা অপর প্রৌঢ় ভাড়াটেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই অশনাক্ত ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে আগুন ধরে গিয়েছিল ওই বাড়িতে। কিন্তু, বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে এখনও পাওয়া যায়নি। বাড়ির কেয়ারটেকারকে ইতিমধ্যেই আটক করেছে পুলিশ। চলছে জিজ্ঞাসাবাদও।
বারাকপুর পুরসভার মুখ্য পুর প্রশাসক উত্তম দাস বলেন, ‘‘এই বাড়িতে তিন জন ভাড়াটে থাকেন। এদের মধ্যে রয়েছেন এক অবাঙালিও। আজ তাঁর ঘরেই বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। সকলে প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায় গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত রয়েছে। বিস্ফোরণের জেরে দু’জন জখম হয়েছেন। যাঁর ঘরে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেখানে কিছুটা গাঁজা পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু রাসায়নিকও উদ্ধার হয়েছে। ওই ঘরে যিনি ভাড়াটে ছিলেন তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি সত্যিই মানসিক ভারসাম্যহীন নাকি এর পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: Child Death: ‘ছেলেটার মুখও দেখতে পারলাম না…’ ২৪ ঘণ্টা না পেরতেই হাসপাতালেই মৃত্যু সদ্যোজাতর!