উত্তর ২৪ পরগনা: পুজোর রেশ কাটেনি। দশমীর রাতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়ার কাঁকিনাড়া এলাকা। শুক্রবার রাতেই কাঁকিনাড়া হাই স্কুলের গায়ে বোমা (Bomb Blast) ছুড়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। আচমকা বোমাবাজিরে জেরে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। কেন এই বোমাবাজি তা নিয়ে সন্দিহান তদন্তকারীরা। যদিও, ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা গীতা দেবী মণ্ডল বলেন, “দশমীর রাতে আমরা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলাম। সেইসময় কয়েকজন ঝামেলা শুরু করে। তারপর রোশন ও লাঙ্গা নামে দুটি ছেলে পায়ে হেঁটে আমাদের দিকে এসে বোমা ছোড়ে। ওরা কেন আচমকা বোমা মারল জানি না। ওরা কোন দলের তাও জানা নেই। মাঝেমধ্যেই এই এলাকায় বোমাবাজি চলে। প্রাণ হাতে নিয়ে চলতে হয়। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমরা। ওরা আজ স্কুলের গায়ে বোমা মেরেছে, কাল যে আমাদের ঘরে এসে মারবে না তা কে বলতে পারে!”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার দশমীর রাতে দুর্গাপুজোর বিসর্জনেই মেতে ছিল এলাকাবাসী। আচমকা রাত দশটা নাগাদ স্কুলের রাস্তায় ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পান সকলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বোমাবাজি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের জেরে স্কুলবাড়ির গায়ে বোমার দাগও মিলেছে।
ফের অর্জুন গড়ে বোমাবাজির ঘটনায়, তৃণমূল নেতা প্রিয়াঙ্কু পান্ডে বলেন, “ভাটপাড়া বারবার উত্তেজিত হয় এখানকার বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিঙের দৌলতে। তিনি চান, গোটা এলাকা অশান্ত থাকুক। যাতে তাঁর জ়েড প্লাস সিকিউরিটি হাসিল হয়। ওঁর নিজের সিকিউরিটি খালি বাড়িয়ে যেতে পারেন। একজন সাধারণ ছেলে যে কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নয়, সে কী করে হাতে বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র পায়! এর পেছনে সাংসদেরই হাত রয়েছে। ভাটপাড়াকে তিনিই অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছেন। আমি চাই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।”
পাল্টা ব্যারাকপুর বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh) দাবি করেছেন, এই ঘটনায় বিজেপি নয়, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই জড়িত। নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেও সাংসদ অর্জুন সিঙের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি হয়। সাতসকালে সিআইএসএফ প্রহরার দেড় ফুটের মধ্যেই সাংসদের বাড়িতে বোমাবাজি হয়। ভোট পরবর্তী পর্যায়ে জুলাই মাসেও অর্জুনের বাড়িতে বোমাবাজি হয়েছিল।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে টুইট করেছিলেন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁর দাবি, রাজ্যে যে এখনও হিংসা অব্যাহত। সাংসদের বাড়িতেই সাতসকালে বোমাবাজি হয়েছে। এর থেকে ভয়ঙ্কর আর কী আছে! সাংসদের নিরাপত্তা ব্য়বস্থা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সাংসদের বাড়িতে এ হেন বোমাবাজির ঘটনায় তদন্তভার পড়ে এনআইএ-র হাতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জালে ধরাও পড়ে দুষ্কৃতী। বাড়ানো হয় অর্জুনের নিরাপত্তাও।
ভোট উত্তরোত্তর সময় থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাটপাড়া-জগদ্দল এলাকা। মে মাসেও জগদ্দলে অর্জুন সিংয়ের বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয়। পুলিশের সামনেই অর্জুন সিং অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে।
জগদ্দলে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বোমাবাজি হয়েছে। মে মাসেই জগদ্দলের রুস্তম গুমটি এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। দুস্কতীরা ১৫-১৬ টি বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় এইভাবে বোমবাজির ঘটনায় বাসিন্দারা আতঙ্কে ভুগছেন।
আরও পড়ুন: WB Bypoll 2021: পুজো শেষেই রাজ্যে আরও উপনির্বাচন, মনোনয়নপত্র জমা খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেবের