কামারহাটি: সিপিআইএম প্রার্থীর বাড়িতে হঠাৎ হাজির মদন মিত্র। কলিং বেল বাজান, দরজা খুলতেই সটান ঢুকে পড়েন ড্রয়িং রুমে। চেয়ারে বসে বেশ কিছুক্ষণের আলাপচারিতা। চা খান আবার হাতও মেলান। পুরভোটের আগে কামারহাটিতে রাজনীতির এক অন্য সমীকরণ। বিষয়টা কী? আসলে ‘তৃনমূলের ভয়ে’ প্রচারে বেরোতে পারছেন না কামারহাটি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআইএম প্রার্থী পেশায় শিক্ষক আসলাম আলি। ভোট প্রচারে বেরোলেই তৃনমূল কর্মীরা তাঁকে ভয় দেখাচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমনকি তাঁকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই সোজা সিপিআইএম প্রার্থীর বাড়িতে সটান উপস্থিত বিধায়ক মদন মিত্র। তাঁকে নির্ভয়ে প্রচারে বেরনোর কথা বলেন তিনি। আর কোনওভাবেই তিনি হুমকির মুখে পড়বেন না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
সিপিআইএম প্রার্থী আসলাম আলি অভিযোগ করেন, তাঁর এলাকায় প্রচুর তৃণমূল কর্মী সমর্থক রয়েছেন। পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন ভাবে হুমকির শিকার হচ্ছেন। তাঁকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি দেওয়া হয়েছে খুনের হুমকিও। প্রথম প্রথম ব্যানার, পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছিল। প্রতিবাদ করাতেই হুমকির মুখে পড়তে শুরু করেন তিনি। একপ্রকার ভয়ে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন তিনি। তাঁকে প্রচার করতেই দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
আপতত দু’দিন ধরে গৃহবন্দি আসলাম আলি। কীভাবে ভোটের দিন বের হবেন, সেটাই তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। খবর পৌঁছয় এলাকার বিধায়ক মদন মিত্রের কাছে। একথা শোনার পরই কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র নিজেই যান ওই সিপিআইএম প্রার্থী আসলাম আলির কাছে। তাঁকে আশ্বাস দেন, ‘নিশ্চিন্তে প্রচার করুন, মদন মিত্র সাথে আছে।’
বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, “আমি থানা থেকে শুনলাম। এলাকায় আমায় দুজন সিপিএমের ছেলে বলল।” এরপরই সিপিএম প্রার্থীকে ক্যামেরার সামনেই বলেন, “আপনি মারুন পোস্টার, কেউ যদি কিছু করে, আর সে যদি তৃণমূলের ছেলে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। কিন্তু আমরা অযথা বদনাম নিতে চাই না। কামারহাটিতে লুঠ করার কোনও প্রয়োজনই হবে না। সারা বাংলায় লুঠের প্রয়োজন নেই।” সিপিআইএম প্রার্থীর সামনে দাঁড়িয়েই, সব ওয়ার্ডে তৃণমূল জেতার চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।
অন্যদিকে, সিপিআইএম প্রার্থী আসলাম আলি বলেন, “আমি বাজার করতে বের হতে পারছি না। আমি প্রচারে বের হতে পারছি না। পিছন থেকে আওয়াজ দিচ্ছে। তাই আমি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছিলাম। বেলঘরিয়ার আইসিকে জানিয়েছিলাম। এক সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন। যদি কিছু না করে, তাহলে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে বলতে বাধ্য হব। তাছাড়া মদন মিত্রের আশ্বাসে আমি সন্তুষ্ট।”
তবে এই রাজনৈতিক সৌজন্যতা ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে ডাকসাইট নেতা যে আগাম কোনও বার্তা ছাড়াই এভাবে বাড়িতে চলে আসতে পারেন, ভাবতেই পারছেন না সিপিআইএম প্রার্থী।
আরও পড়ুন: দল নিয়ে এবার প্রকাশ্যেই অন্য বার্তা সায়ন্তনের! কীসের ইঙ্গিত দিলেন তিনি?