উত্তর ২৪ পরগনা: বৃষ্টি পড়ছিল। দোকান ছিল সে অর্থে ফাঁকাই। এক ব্যক্তি দোকানে প্রবেশ করেন। পরনে হলুজ জামা, মাথায় তাঁর হেলমেট। দোকানদারের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন এক গুচ্ছ। প্রথমে একটি মাদুলি, পরে একটি লকেট, শেষে সোনার চেন। একে একে জিনিস দেখতে চেয়েছেন। ব্যবসায়ীও দেখিয়েছেন গ্রাহক মনে করেই। গ্রাহকের হাতে তখন জ্বলছিল চুরুট! আর সেই গন্ধে রীতিমতো বুঁদ ব্যবসায়ী। গ্রাহক যা বলছেন, ব্যবসায়ী সেটাই করে চলেছেন। এরই ফাঁকে দোকান থেকে হাওয়া কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না। ব্যবসায়ীকে হিপনোটাইজ করে সোনার দোকানে লুঠ চালানোর অভিযোগ উঠল উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরে।
বিকাশ দত্ত নামে ওই ব্যবসায়ীর বয়ান অনুযায়ী, মাথায় হেলমেট পরে এক ব্যক্তি দুপুরে দোকানে ঢুকেছিলেন। প্রথমে মাদুলি, পরে লকেট, তারপর সোনার হার দেখতে চান । দোকানদার তা বার করে দেখান। কোথা থেকে সোনার জিনিস বার করা হচ্ছে, সেটা দেখে নেন গ্রাহক।
গ্রাহকের হাতে ছিল চুরুট । ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী, চুরুটের ধোঁয়াতে তিনি বুঁদ হতে শুরু করেছিলেন। সেই সুযোগেই কথার জালে ফাঁসিয়ে দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের নীচে সিন্দুক থেকে সোনার গয়নার বাক্স বার করে নেন ওই গ্রাহক। তার মধ্যে একাধিক চেন-সহ মূল্যবান সোনার গয়না ছিল।
ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সেগুলো সবই অর্ডারের সামগ্রী ছিল। অন্য গ্রাহক থেকে অর্ডার নিয়ে বানিয়ে রেখেছিলেন দোকানদার । বার করে নিয়ে আসার পরও দোকানদার এতটাই বুঁদ হয়ে পড়েছিলেন যে তখনও ওই ব্যক্তির কথাতেই ভুলে তাঁকে জিনিস দেখিয়ে যাচ্ছেন। একটি লকেট পুনরায় মাপতে বলেন ওই ব্যক্তি।
সেই সুযোগে দোকান থেকে বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তি । তিনি চলে যাওয়ার পর হুঁশ ফেরে ব্যবসায়ীর। কীভাবে এতক্ষণ হেলমেট পরেই কথা বলে গেলেন ওই ব্যক্তি! কেন তাঁকে হেলমেট খুলতে বললেন না একবারও? তাঁর নিজের মনেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
যখন ব্যবসায়ীর সম্বিত ফেরে, ততক্ষণে তাঁর দোকান থেকে গায়ের কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী। দ্রুত বাইরে বেড়িয়ে অন্য গাড়িতে ওই ব্যক্তিকে ধাওয়া করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু আর খুঁজে পাননি।তড়িঘড়ি দোকান বন্ধ করে বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি। বারাসত থানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সন্ধ্যার পর স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির দ্বারস্থ হন হৃদয়পুরের ব্যবসায়ী বিকাশ দত্ত।
১৬ বছরের ব্যবসার জীবনে কোনওদিন এরকম ঘটনার সম্মুখীন হননি তিনি। বিকাশ দত্তের কথায়, “আমার মাথাটা যে কী হয়ে গিয়েছিল, কে জানে! লোকটা যা বলল, এক নাগাড়ে করে গেলাম। মাথাই কাজ করল না। বললামও না হেলমেটটা খুলতে! দেখতেও পেলাম না মুখটা।” এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসীরা। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Behela Murder: কীভাবে তপনের আংটিতে রক্তের দাগ? একাধিক অচেনা ব্যক্তির ফোন! পর্ণশ্রী খুনে জটিল ধাঁধা