Behela Murder: কীভাবে তপনের আংটিতে রক্তের দাগ? একাধিক অচেনা ব্যক্তির ফোন! পর্ণশ্রী খুনে জটিল ধাঁধা
Behala Murder: প্রশ্ন উঠছে, দু'ঘণ্টা যখন ফোন অফ ছিল, তখন তপন মন্ডলের ফোনে কাদের ফোন এসেছিল?সেগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কলকাতা: ক্রমেই জটিল হচ্ছে পর্ণশ্রী মার্ডার কেস। একাধিক ক্ষেত্রে রয়েছে মিসিং লিঙ্ক! সন্দেহের তালিকায় স্বামী। কেন দু’ঘণ্টা মোবাইল সুইচ অফ ছিল তপন মণ্ডলের? কেন তাঁর আংটিতে লেগে ছিল রক্তের দাগ? যখন তিনি নিজেই দাবি করেছিলেন রক্তাক্ত স্ত্রী ও সন্তানের দেহে তিনি হাত দেননি! অচেনা নম্বর থেকে তপন মণ্ডলের কাছে ফোন এসেছিল বিকালেই। সেই নম্বরগুলিও বা কাদের? এই সব একাধিক প্রশ্নের উত্তর হাতরাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে ফ্ল্যাটে সুস্মিতা মন্ডলের ফোন এবং ছেলে তমজিত মন্ডলের ল্যাপটপ উধাও। প্রশ্ন উঠছে, এই দুটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কেন মিসিং? সেই অর্থে ঘরে আর কোনও কিছুই মিসিং ছিল না।
.তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘরে দুটি চাবি। একটি সুস্মিতা ও আরেকটি তপনের কাছে থাকে। তবে পুলিশের কাছে তপন মন্ডল জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার দিন চাবি নিয়ে বেরোননি। পুলিশ সূত্রে খবর সেই চাবিটিও মিসিং রয়েছে।
তপন মন্ডলের ব্যাঙ্কের সহকর্মীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর ব্যাঙ্কের কর্মীরা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, ঘটনার দিন অফিস আওয়ার্সে তপন মন্ডল ব্যাঙ্কেই ছিলেন। পুলিশের অনুমান তিনটে থেকে পাঁচটার মধ্যে এই খুন হয়েছে। সেই সময় ব্যাংক কর্মীদের কথামতো তপন মন্ডল ব্যাংকেই ছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে তাহলে কেন খুনের সময় অর্থাৎ ২ঘন্টা তপন মন্ডলের ফোন বন্ধ ছিল।
সিবিআর চেক করে পুলিশ দেখেছে বেশ কিছু অপরিচিত নম্বর থেকে তপন মন্ডলের ফোন এসেছে। এমনকি তপন মন্ডল যখন ফোন অন করেন, সেই সময় কিছু মিস কল অ্যালার্টও আসে অপরিচিত নম্বর থেকে।
প্রশ্ন উঠছে, দু’ঘণ্টা যখন ফোন অফ ছিল, তখন তপন মন্ডলের ফোনে কাদের ফোন এসেছিল?সেগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, স্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না তপন মন্ডলের। স্ত্রীর কাজ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। শুধু কাজের জন্যই যে ঝামেলা সেটা নয়, আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে ঝামেলার। সেগুলিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জেরায় তপন মন্ডল দাবি করেছিলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীয়ের ফোন সুইচ অফ পান। তিনি বাড়ি ফিরে পাড়ার লোকদের বলতে থাকেন তাঁরা তাঁর স্ত্রী সুস্মিতাকে দেখেছেন কিনা। তবে প্রশ্ন উঠছে, যদি বাড়ির লোকের ফোন কেউ অফ পান, তাহলে পাড়ার লোককে না জিজ্ঞাসা করে বাড়ির ভেতরে গিয়ে আগে দেখেন! এক্ষেত্রে তপন উল্টোটাই করেছিলেন।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তপন মন্ডল জানিয়েছেন, ছেলে এবং বউয়ের রক্তাক্ত দেহ দেখে তিনি তাঁদের দেহে হাত দিতে সাহস পাননি। তাহলে তপন মন্ডলের আংটিতে রক্তের দাগ কোথা থেকে এল? এইসব প্রশ্ন ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করেছে পুলিশের তদন্তের পর।
সোমবার রাতে বেহালা পর্ণশ্রীর সেন পল্লির এক আবাসন থেকে মা ও ছেলের নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রক্তে ভেসে যাচ্ছিল ঘর। কোনও ক্রমে কাপড়ে মুড়ে দেহ দু’টি তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিনভর একের পর রহস্য-সূত্র উঠে এসেছে এই ঘটনা ঘিরে। ইতিমধ্যেই লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা এই ঘটনার তদন্ত ভার হাতে তুলে নিয়েছে।
বিশেষ সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, তপন মণ্ডলের আংটিতে রক্তের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। যা পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ মনে করছে এই ঘটনার কারিগর পেশাদার কোনও খুনি নয়। এই ঘটনায় যে জড়িত সে ডানহাতি বলেও মনে করছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান কোনও পেশাদার খুনি এই ঘটনায় জড়িত নয়। ইতিমধ্যেই ফরেনসিক টিমের হাতে যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে আবাসনে এই ঘটনা, সেখানকার ড্রেনেজ পাইপলাইন থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেনসিক টিমের সদস্যরা। এমনও সন্দেহ করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর, যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে নিজের ‘মিশন’ সফল করার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য বাথরুমে স্নান করে। সে চেয়েছে শরীর থেকে রক্তের চিহ্ন লোপাট করতে। এমনও মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনায় প্রথমে সুস্মিতা মণ্ডলকে খুন করা হয়েছে। তার পর ছেলে তমোজিৎ মণ্ডল কোপানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আততায়ী ডানহাতি, পেশাদারও নয়! মা-ছেলে খুনের ঘটনায় রহস্য বাড়ছে