৩০০ টাকাতে কীভাবে কোভিশিল্ড? নাকি এটাও নকল? পানিহাটি টিকাচক্রে জোরাল হচ্ছে প্রশ্ন
Panihati Vaccine Case: তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে নথিতে পুরসভার স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হল? তা নিয়ে এখন অন্ধকারে পানিহাটি পুরসভা।
উত্তর ২৪ পরগনা: পাড়ায় যে এমন টিকা চক্র চলছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁরা। পানিহাটির ধানকল মোড়ে টিকা চক্রের পর্দাফাঁস (Panihati Vaccine Case) হতেই স্তম্ভিত এলাকাবাসীরা।
স্থানীয় এক মহিলাই বললেন, “হতে পারে, তবে বুঝতে তো পারিনি। আমরা এখানেই থাকি। কিন্তু এসব ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারিনি, বলতেও পারব না।” পানিহাটি টিকা চক্রের পর্দা ফাঁস হতেই বেশ কয়েকটি জায়গায় ধন্দ তৈরি হয়েছে।
ধন্দের টিকা ৩০০ টাকায় কোভিশিল্ডের ব্যবস্থা কীভাবে? দাম অবিশ্বাস্যও কম, তবে কি এই টিকাও জাল? কোথা থেকে এল টিকা? তদন্তে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বৃদ্ধাশ্রমে অতিরিক্ত টিকার জোগান রয়েছে। চোরাচালান কি সেখান থেকেই?
মেডিক্যাল অফিসার কি টিকা সরাতে পারেন, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ কোভিশিল্ডের ভাওয়াল থেকে ১১-১২ জনকে টিকা দেওয়া যেতে পারে। খাতায় কলমে, যেখানে বলা রয়েছে একটি ভাওয়াল থেকে ১০ জন টিকা পেতে পারেন। তাহলে কি বাড়তি ভাওয়াল পুর-চিকিত্সক সরিয়ে ফেলেছিলেন? সে জন্যই কি ১৭ জুন টিকা দেওয়ার তিন দিন পরে পুরসভার নথিতে নিজের নাম নথিভুক্ত হতে দেখলেন অভিযোগকারী? প্রসঙ্গত, অভিযোগকারী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “টিকা নেওয়ার পর আমাকে বিল দেওয়া হয়নি। যে নথি দেওয়া হয়েছিল, সেটিতে পুরসভার স্ট্যাম্প রয়েছে।” এখানে রয়েছে বড় ধাধা!
তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে নথিতে পুরসভার স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হল? তা নিয়ে এখন অন্ধকারে পানিহাটি পুরসভা। পুর কর্তা TV9 বাংলাকে বলেন, “আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের মাধ্যমেই জেলাশাসক খবর পান। সেখান থেকে এসডিও মারফত আমাদের কাছে খবরটা আসে।”
এদিকে, পানিহাটিতে টিকা কেলেঙ্কারিতে জড়িত সন্দেহে আটক চিকিত্সক বিপ্লব রুদ্রকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। যদিও পানিহাটি ভ্যাকসিন স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্পষ্ট জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন পুরসভার আংশিক সময়ের মেডিক্যাল অফিসার। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ও জানিয়েছেন, বিপ্লব রুদ্র নামে যে চিকিত্সককে আটক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি ওই অভিযুক্ত চিকিত্সক। প্রশ্ন উঠছে, কেন অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া হল? তাহলে কি পুরসভার হেফাজত থেকে টিকা চুরি হয়েছে?
টিকা চক্রের পর্দাফাঁস হতেই অস্বস্তি বেড়েছে পানিহাটি পুরসভার। একজন চিকিত্সক তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে টিকা দিলেন, তাহলে তাঁদের কাছে কীভাবে পুরসভার নথি পৌঁছে গেল? অভিযুক্ত চিকিত্সক বিপ্লব রুদ্র পুরসভার চুক্তিভিত্তিক মেডিক্যাল অফিসার ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। এক একটা আর্বান এলাকার দায়িত্বে থাকেন মেডিক্যাল অফিসাররা। টিকা বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্তও তাঁরা। পুরসভার ভাগ থেকে যে টিকা যায়নি, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এপ্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেছেন, “এখন তদন্ত চলছে। পুরো তথ্য সামনে আসেনি। ডাক্তার তো লিখিত দিয়েছেন, তাঁর চেম্বারে কিছুই হয়নি। তাহলে মানব কীভাবে? অভিযুক্ত চিকিত্সক বিপ্লব রুদ্র তো তাই বলেছেন, কীভাবে তা বিশ্বাস হবে? এখনও পুরো তথ্য সামনে আসেনি।” আরও পড়ুন: পানিহাটি টিকা কেলেঙ্কারি: তড়িঘড়ি কেন ছাড়া হল অভিযুক্ত চিকিত্সককে? তবে কি রয়েছে পুর-যোগ?