Bengal Tiger: ‘আমারে বাঘে ধরেছে, তুই এসে বাঁচা…’ বাঘের সঙ্গে লড়াই করছে স্বামী! থর থর করে কাঁপছে স্ত্রী
Sandeshkhali: আক্রান্ত কৃষকের স্ত্রী জানান, সেই সময় বুদ্ধি করে ছয়রাপ বাঘের চোখে কাদা ছিটিয়ে দেন।
উত্তর ২৪ পরগনা: প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় সন্দেশখালির বাঘকে জালবন্দি করেছেন বনদফতরের কর্মীরা। কিন্তু এই বাঘ রবিবার সাত সকালে যেভাবে মিঠাখালির কৃষককে ক্ষতবিক্ষত করেছে, সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে স্ত্রী আবিরণী বিবির। নিজে মুখেই সেই রোমহর্ষক মুহূর্ত বর্ণনা করেছেন আবিরণী। বাঘের সঙ্গে তাঁর স্বামী রীতিমত লড়াই করেছেন এদিন। বসিরহাট মহকুমায় সুন্দরবনের সন্দেশখালি থানার মণিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মিঠাখালি। এদিন সকালে সেখানেই বাঘের আক্রমণের শিকার হন ছয়রাপ কারিগর। ৬০ বছর বয়সী ছয়রাপ একজন কৃষক। লোকের জমিতে ভাগচাষী হয়ে কাজ করেন তিনি। বাড়ির কাছের পুকুর থেকে শাকপাতা তুলে, কখনও মাছ ধরে কোনওমতে তাঁর সংসার চলে।
আবিরণী বিবি জানান, রবিবার সকালেও ছয়রাপ রায়মঙ্গল নদীর চরে গিয়েছিলেন ঘাস কাটতে। সেই সময়ই হঠাৎ সেখানে দেখা মেলে দক্ষিণরায়ের। বিশাল চেহারা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই শীর্ণকায় কৃষকের উপর! এদিকে সে সময় আবার পাশেই জমিতে কাজ করছিলেন আবিরণী বিবি। স্বামীর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন তিনি। এরপর যে দৃশ্য তিনি দেখেন, তাতে তাঁর মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা হয়।
আবিরণী বিবি জানান, বৃদ্ধ ছয়রাপ তখন প্রাণপণে বাঘের থাবা থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ততক্ষণে ছয়রাপের হাতে কামড় বসানো হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের বাঘ রাজার। আক্রান্ত কৃষকের স্ত্রী জানান, সেই সময় বুদ্ধি করে ছয়রাপ বাঘের চোখে কাদা ছিটিয়ে দেন। এরপরই পালিয়ে বাঁচেন। স্ত্রীকে দেখে স্বামীর মুখে সে সময় শুধু দু’টো কথাই ছিল, ‘আমাকে বাঁচাও’! স্বামীর এমনভাবে করুণ আর্তি নিয়ে প্রাণপণে ছুটে আসা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি আবিরণী। চিল চিৎকার জুড়ে গোটা মিঠাখালিকে নদীর ধারে তুলে আনেন।
আবিরণী বিবি বলেন, “ঘাস কাটতে গিয়েছিলাম আমরা। আমার থেকে দশ হাত দূরে ছিল ও। হঠাৎ চিৎকার করে বলছে আমারে বাঘে ধরেছে। আমি ভেবেছি ঠাট্টা করছে বোধহয়। ও বলছে আমারে তুই এসে বাঁচা। ছুটে গিয়ে দেখি বাঘের সঙ্গে লড়ছে। কাদা মেরেছে চোখে। তারপর ছেড়েছে। তারপর ওখানেই পড়ে গিয়েছে। আমি ওকে টেনে তুলে আনি।”
এরপরই গ্রামবাসীরা ছয়রাপকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসার পর কলকাতার চিত্তরঞ্জন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। আপাতত সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। আবিরণীর এখন চিন্তা, সংসারে একমাত্র রোজগেরে মানুষটার কী পরিণতি হবে? প্রত্যন্ত মিঠাখালির প্রতিটা মানুষই জীবনযুদ্ধে বীর সেনানি! তবু চিন্তা একটাই। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছয়রাপ আদৌ সুস্থ কবে হবে! আবিরণী বিবির কথায়, “আমার কোনও ভয় নেই। শুধু চিন্তা হচ্ছে স্বামীটাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারব তো?”
আরও পড়ুন: Bengal Tiger: আট ঘণ্টা ধরে চলল বাঘ বন্দির খেলা! অবশেষে জালে দক্ষিণরায়