‘একটা নাইটি চেয়েও পায়নি মেয়ে, জামাই খালি টাকা নিয়েছে’, বধূর রহস্যমৃত্যুতে তোলপাড় হাড়োয়া
Domestic Violence: অভিযোগ, বিয়ের সময় সুভাষ ও তাঁর পরিবারের কোনও দাবিদাওয়া না থাকলেও বিয়ের তিন-চারমাস পর থেকে শুরু হয় টাকাপয়সা চাওয়া।
উত্তর ২৪ পরগনা: পণের দাবিতে বধূহত্যার অভিযোগ উঠল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়ায় এক বধূর রহস্যমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল এলাকা। শনিবার হাড়োয়ার গাবড়িয়াতে শ্বশুরবাড়ি থেকে এক বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতার পরিবারের অভিযোগ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই বধূ অথবা তাঁকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে মৃতার নাম দিশা বারিক।
মৃতা দিশা বারিকের পরিবারের অভিযোগ, এক বছর তিন মাস আগে দেখাশোনা করেই বিয়ে হয়েছিল পূর্বসিঁথি বিধান পল্লির বাসিন্দা দিশা ও হাড়োয়ার গোবরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডলের। অভিযোগ, বিয়ের সময় সুভাষ ও তাঁর পরিবারের কোনও দাবিদাওয়া না থাকলেও বিয়ের তিন-চারমাস পর থেকে শুরু হয় টাকাপয়সা চাওয়া। দিশা বাপের বাড়িতে এলেই সুভাষের কথামতো টাকাপয়সা চেয়ে নিয়ে যেতেন বলে অভিযোগ। মেয়ের পরিবারের তরফে বিয়ের সময় নগদ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু, টাকা না পেলেই শুরু হত মেয়ের উপর অত্যাচার। শুক্রবার, অত্যাচার সহ্য় করতে না পেরে আত্মহত্য়ার পথকেই বেছে নেন দিশা অভিযোগ এমনটাই। তবে, দিশার পরিবারের সদস্যদের দাবি, আত্মহত্যা নয়, বরং খুন করা হয়েছে দিশাকে। কারণ, বধূর মৃত্য়ুর পর খবর সুভাষের বাড়ির লোক কোনও খবর দেয়নি। এমনকী, বাড়ির সকলে পলাতক। প্রতিবেশীদের থেকে দিশার মৃত্য়ুর খবর পান বলে অভিযোগ।
মৃতার পিসি প্রণতি সর্দারের কথায়, “জামাই এলে খালি টাকা চাইত। এমনকী মেয়ে বাড়িতে এলেও টাকা চেয়ে পাঠাত। আমাদের মেয়ে একটা নাইটি চেয়েছিল, জন্মদিনে। সেটাও দিতে পারেনি। আমরা কিনে দিয়েছি। ফোনে পাওয়া যেত না জামাইকে। বারবার টাকা দিয়ে সব দাবিদাওয়া পূরণ করেও লাভ হয়নি। শুক্রবার রাতে, দিশা গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়েছে বলে বলছে সবাই। জামাইদের পাওয়া যায়নি। সব বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তবে আমাদের ধারণা দিশাকে খুন করা হয়েছে। ও খুব লম্বা ছিল না। ফলে সিলিঙ থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলা ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমাদের মেয়েকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ করেছি। রিপোর্ট এলেই সব সত্যিটা জানা যাবে।”
হাড়োয়া থানার পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান শ্বাসরোধ হয়েই মৃত্য়ু হয়েছে দিশার। পরিবারের বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খোঁজ করা হচ্ছে পলাতক সুভাষ মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের। গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, কোভিড পরিস্থিতিতে প্রায় ৭১ শতাংশ বেড়েছে বধূ নির্যাতন এমন তথ্য়ই উঠে এসেছে একটি রাজ্যস্তরের সমীক্ষায়। এমনকী, প্রাণ বাঁচাতে অনেক মহিলারাই বিভিন্ন হোমে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ খুঁজছেন বিকল্প পেশাও। যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বারের প্রতিনিধি কাজল বসু টিভি নাইন বাংলাকে একটি সাক্ষাত্কারে জানান, লকডাউনে স্বামীরা তাঁদের স্ত্রীকে পৌঁছে দিচ্ছেন যৌনপল্লিতে। শুধুই কি আর্থিক সঙ্কট নাকি এর পেছনে কাজ করছে প্রবল অসহিষ্ণুতা ও অপ্রাপ্তি প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও পড়ুন: ‘দু’দিন সময় দিলাম, বিজেপি না ছাড়লে…’, বাড়ি ফিরতেই ‘অশ্লীল’ ভাষায় হুমকি চিঠি পেলেন পদ্ম নেতা!