পশ্চিম বর্ধমান: ‘কোভিড টিকাকরণে প্রথম বাংলাই’। শহর জুড়ে দেওয়া হয়েছিল এমন হোর্ডিং। টিভি নাইন বাংলার খবরের (TV9 Impact) জেরে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উধাও আসানসোল পুরনিগমের হোর্ডিং! আর এই ঘটনাতেই শোরগোল পড়েছে রাজনৈতিক মহলেও।
আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় করোনা টিকাকরণকে কেন্দ্র করে যে হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে তাতে একদিকে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। অন্যদিকে রয়েছে আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের আইন ও পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটকের ছবি। লেখা হয়েছে, ‘টিকাকরণে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে বাংলা’। নীচে লেখা, ‘আসানসোল পুরনিগম’। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রদত্ত পরিসংখ্যান মেনেই এই হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে এমনটাও লেখা রয়েছে হোর্ডিংয়ে। এদিকে, স্বাস্থ্য়মন্ত্রকের হিসেব বলছে, টিকাকরণের দিক থেকে বাংলা সপ্তম স্থানে। তাহলে, দেশের মধ্যে ‘টিকাকরণে প্রথম বাংলা’ এমন ধারণা হচ্ছে কী করে? হোর্ডিংই বা দিচ্ছে কারা? টিভি নাইন বাংলার খবরের জেরে (TV9 Impact) রাতারাতি উধাও হল সেই হোর্ডিং।
আসানসোলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে টিকা মিলছে না। লাইনে দাঁড়িয়েও ফিরে আসতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত ভ্য়াকসিন নেই। তাঁদের ছুটে যেতে হচ্ছে পাশের রাজ্য় ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায়। আসানসোলে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা সর্বত্র। সেখানে কী করে বঙ্গ টিকাকরণে এক নম্বরে তা কী করে বলা যায়? আসানসোল পুর এলাকার ১০৬ টি ওয়ার্ডের মধ্যে টিকাকরণের কেন্দ্র মোটে ১৩ টি।
সমাজকর্মী শুপ্রদ্বীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, আসানসোলের মানুষ হয়রানির শিকার হয়ে জামতাড়া যাচ্ছেন। অথচ আসানসোল পুরনিগম হোডিং লাগিয়েছিল টিকাতে বাংলা নম্বর ওয়ান। টিভি নাইনে সেই খবর সম্প্রচারের পরেই রাতারাতি উধাও হয়ে গেল হোডিং। তথ্যে গাফিলতি আছে বলেই এই ঘটনা। আসানসোলের বাসিন্দা অভিজিত্ রায় বলেন, “টিকাকরণে বাংলা এখন ৭ নম্বরে। জানতে চাই, সরকারি টাকায় মিথ্যা প্রচার চলছিল না কি হোর্ডিংয়ের তথ্য়টাই আসল!”
আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এদিন শাসক শিবিরকে তোপ দেগে বলেন, “আসানসোলের মানুষ টিকা পাচ্ছেন না। ১০৬ টি ওয়ার্ডে মাত্র ১৩ টি টিকা কেন্দ্র। ভ্যাকসিন সেন্টার না বাড়িয়ে পুরনিগম সরকারি টাকা অপচয় করে শহরজুড়ে মিথ্যা প্রচার করেছিল। আমরা পুরসভা ঘেরাও করে পুরপ্রশাসকের কাছে জবাব চেয়েছিলাম। উনি সদুত্তর দিতে পারেননি। টিভি নাইন বাংলা এই খবরটি তুলে ধরার পরেই সেই হোডিং খুলে নেওয়া হল। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরনিগমের মিথ্যাচার সামনে এলো।”
আসানসোল পুরনিগমের পুরপ্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, সব হোডিং খোলা হয়নি। যে এলাকায় হোডিং এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেগুলিই খোলা হয়েছে। এক একটি হোডিং এর নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে আসানসোল পুলিশ লাইনের দুটি হোডিং হঠানো হয়েছে। ‘টিকাকরণে বাংলা এক নম্বরে’ এই তথ্য় কেন্দ্রের। যদি সেই তথ্য বদল হয়ে থাকে তবে তার পেছনে কেন্দ্রই দায়ী। কারণ, কেন্দ্রের তরফে পর্যাপ্ত টিকা না পেয়েই টিকাকরণে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলা। সেক্ষেত্রে টিকার যোগান পর্যাপ্ত হলেই ফের বাংলা প্রথম স্থান অধিকার করবে বলেই জানিয়েছেন পুরপ্রশাসক। আরও পড়ুন: ‘দুর্গাপুজোয় আমার বাড়ি আসুন’, দিলীপকে নিমন্ত্রণ তৃণমূল সাংসদের