
আসানসোল : একদম সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। খনি পরিবার থেকে উঠে আসা। সাদামাটা জীবনযাপন। নেই চাকচিক্য। কোনও সেলিব্রিটি তো ননই। তাই হাতের নাগালের মধ্যে সবসময় পাওয়া যায় সিপিএম-এর প্রার্থীকে। দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র তার অবাধ বিচরণ। কিন্তু সাদামাটা এই প্রার্থী কি পারবেন সাংসদে আওয়াজ তুলতে? কারণ তাঁর প্রতিপক্ষে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করছেন বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। ফলে লড়াই যে শক্ত সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু জাহানারা কী ভাবছেন?
জাহানারার কথায়, গত দশ বছর ধরে বঞ্চিত আসানসোল। বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় বা শত্রুঘ্ন সিনহা! কেউই লোকসভাতে আসানসোলের জন্য আওয়াজ তোলেননি। এই দশ বছরে বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রয়ত্ব কারখানা হিন্দুস্তান কেবলস, বার্নপুর বার্নস্ট্যান্ডার্ড, ব্লু ফ্যাক্টরি সহ বহু কারখানা। মেলেনি ধস পুনর্বাসন। গায়ক নায়করা আসছেন। নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে চলে যাচ্ছেন। বামপন্থীরা রাস্তায় রয়েছেন। মজদুর মেহনতি সাধারণ মানুষের পাশে লালঝান্ডা আছে থাকবে।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে জাহানারা খানের। ৫৫ বছর বয়সী জাহানারা খান জামুরিয়া বিধানসভায় ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল এবং
২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাম বিধায়ক ছিলেন। ২০১১ সালের রাজ্য যখন পরিবর্তনের সবুজ ঝড়, সেই সময় তৃণমূল প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়কে সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খান প্রায় ১০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন। এমনকী, ২০১৬ সালের ভোটেও সাড়ে ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন সিপিএম-এর জাহানারা খান। তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সেবার ভি শিবদাসন। ২০২১ সালে অবশ্য তাঁকে আর প্রার্থী করা হয়নি। প্রার্থী করা হয়েছিল ঐশী ঘোষকে।
এরপর ২০২২ সালে সিপিএম-এর মহিলা সংগঠনে ২৯তম রাজ্য সম্মেলনে জামুড়িয়ার প্রাক্তন বিধায়ক জাহানারাকে রাজ্য সভানেত্রী করা হয়। বিধায়ক থাকাকালীন এবং স্থানীয় স্তরে ‘ডাকাবুকো’ নেত্রী হিসেবেই তাঁর পরিচিতি আছে। জাহানারা খান পেশায় একজন অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের শিক্ষিকা। জামুরিয়া বিধানসভার কেন্দা এলাকায় তার বাড়ি। মোট সাত ভাই বোন। দুই ভাই পাঁচ বোন। যার মধ্যে এক ভাই মারা গিয়েছেন। বাবা ছিলেন খনি মজদুর এবং সিপিএমের কর্মী। জাহানারা খান আজও তার ভাই বোনদের নিয়ে ইসিএলের পরিত্যক্ত ছোট্ট একটি আবাসনেই থাকেন।
রানিগঞ্জ গার্লস কলেজ থেকে পড়াশুনা করেন। ১৯৯০ সালে স্নাতক হন। মূলত যুব সংগঠন থেকে তার রাজনীতিতে হাতে খড়ি।পরবর্তীকালে জামুরিয়া মহিলা সংগঠনের নেত্রী হয়ে ওঠেন। পঞ্চায়েত প্রধান পরে ২০০৮ সালে জামুরিয়া পঞ্চায়েতের সভাপতির পদেও ছিলেন। ওই সময়কালেই বিধানসভার টিকিট দেওয়া হয়েছিল। সিপিএম নেত্রী বলেন, “দল আমার উপর আস্থা রেখেছে।আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই শিল্প কারখানা মেহনতি মজদুরদের জন্য। রাজ্য দিদি এবং কেন্দ্রে মোদী সরকারের যে বঞ্চনা। সেই বঞ্চনার জবাব দেবে আসানসোলে মানুষ।” মহিলা নেত্রী বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিনিময়ে বাংলার মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে খেলা হচ্ছে। সন্দেশখালীর মতো ঘটনা ঘটছে। রাজ্য জুড়ে শেখ শাহজাহানরা রয়েছে। তাঁদের মুখোশ খুলবে।” লোকসভা ভোটে জেতার ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী জাহানারা খান।