দুর্গাপুর: নিজের হাতে পোষ্য কুকুরের বেল্ট দিয়ে স্ত্রীকে খুন (Murder) করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন স্বামী। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারে বিপ্লব পরিধার এ হেন বিবৃতিতে চমকে উঠেছিল কাঁকসা। অবাক হয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার, ধৃত বিপ্লব পরিধার বাড়িতে যান গোয়েন্দারা। সেখানে গিয়ে, রবিবারের ঘটনার পুনর্নিমাণ করে দেখেন তদন্তকারীরা।
এদিন দুপুরে, ধৃত বিপ্লবকে সঙ্গে নিয়েই তাঁর ফ্ল্যাটে হানা দেন তদন্তকারীরা। তাঁদের সামনেই গোটা খুনের (Murder) ঘটনা কীভাবে ওইদিন বিপ্লব সমাধা করেছিলেন তা একটি টেডিবিয়ারের মাধ্যমে করে দেখান। বিপ্লবের প্রতিটি পদক্ষেপ এদিন খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন গোয়েন্দারা। ধৃত যেহেতু নিজেই এসে থানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন তাই কিছুটা হলেও তদন্ত গতি পেয়েছে বলেই মনে করছেন কাঁকসার পুলিশ কর্তারা। তবে, সত্যিই বিপ্লব একা এই খুনের কীর্তি ঘটিয়েছেন, নাকি সঙ্গে অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন, দাম্পত্য় মনোমালিন্য ছাড়া আর কোনও বিরোধের থেকে এই খুন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
গত রবিবার সন্ধেয় কাঁকসা থানায় যান পেশায় ব্যাঙ্ক আধিকারিক বিপ্লব পরিয়াদ। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত তিনি। বাইকে চেপে বিপ্লব থানায় গিয়ে জানান যে তিনি নিজেই তাঁর স্ত্রী’কে খুন করে এসেছেন। কার্যত থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তাঁকে নিয়েই আবাসনে যায় পুলিশ। বামুনারা এলাকায় একটি আবাসনে থাকতেন ওই ব্যাঙ্ক অফিসার ও তাঁর স্ত্রী ইপ্সা প্রিয়দর্শিনী।
আবাসনে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, ঘরে বসে রয়েছে একটি কুকুর। তার থেকে কিছু দূরেই পড়ে রয়েছে ইপ্সার শ্বাসরুদ্ধ নিথর দেহ। গলায় জড়ানো পোষ্য়ের বেল্ট। সেই রাতেই মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া ময়নাতদন্তে।
জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বিয়ে হয় বিপ্লব পরিধা ও ইপ্সা প্রিয়দর্শিনীর। তাঁরা দু’জনেই ওডিশার কটকের বাসিন্দা। তবে কর্মসূত্রে তাঁরা এখানে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। পারিবারিক অশান্তি লেগে থাকত বলে জানা গিয়েছে। রবিবার সন্ধে নাকি সেই অশান্তি চরমে ওঠে। অভিযুক্ত স্বামীর বয়ান অনুযায়ী, অশান্তি চরমে উঠলে রাগের মাথায় স্ত্রী’কে খুন করে বসেন তিনি। পোষা কুকুরের বেল্ট দিয়ে স্ত্রী’র গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়েছে ওই মহিলাকে। ইতিমধ্যেই ইপ্সা প্রিয়দর্শিনীর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত বিপ্লব জানান, স্ত্রী ইপ্সার চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। কখনও হাজার হাজার টাকার শপিং করতেন। বাড়িতে রান্না সহ কোনও কাজই করতেন না বলে অভিযোগ স্বামীর। বিপ্লব বলেন, রবিবার তাঁর স্ত্রী দাবি করেন কলকাতায় গিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর কোর্স করতে চান। সেই সূত্রেই অশান্তি চরমে ওঠে। তিনি নিজে কাজে বেরনোর আগে রান্ন করে যেতেন ও এসে ফের রান্না করতেন বলে জানিয়েছেন।
এক প্রতিবেশী জানান, তেমন কোনও অশান্তির কথা তিনি শোনেননি কোনোদিন। আবাসনের ওই বাসিন্দা জানান, ইপ্সার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই কথা হত তাঁর। স্বামী অফিসে চলে গেলে মাঝেমধ্যে পোষা কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বেরতেন তিনি। তখনই কথা হত তাঁদের মধ্যে। তবে অশান্তির খবর সে ভাবে কোনোদিন শোনেননি। একদিনই স্বামী-স্ত্রী’র ঝগড়া কানে এসেছিল তাঁর। মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। এদিকে বিপ্লবাবুর কোনও অনুতাপ নেই স্ত্রী’কে খুন করে। তিনি জানান, হাতেপায়ে ধরেও স্ত্রী’কে কিছুই বোঝাতে পারতেন না তিনি। সেই থেকেই অশান্তি। সেখান থেকেই আক্রোশের বশে খুন বলে অনুমান তদন্তকারীদের। আরও পড়ুন: পাহাড়ে লুপ্ত বিনয়পন্থী মোর্চা, আত্মপ্রকাশের পরেই কাজে নতুন দল, ঘোষণা অনীতের