Raniganj: সম্প্রীতির নজির, মৃত যোগেন্দ্রর পারলৌকিক ক্রিয়ার দায়িত্ব নিলেন বন্ধু শামসুদ্দিন
Paschim Bardhaman: যোগেন্দ্রর পরিবারে কেউ ছিল না। তাই তাঁর মৃত্যুর পর পারলৌকিক ক্রিয়া কে করবেন, তা নিয়ে একটি সংশয় তৈরি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন তাঁর বন্ধু শামসুদ্দিন।
রানিগঞ্জ : এই পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেই জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি লিখে গিয়েছেন, “মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান”। এবার কাজী নজরুল ইসলামের সেই জেলাতেই দেখা গেল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সম্প্রীতির এক অসামান্য নজির দেখলেন রানিগঞ্জবাসী। রীতিমতো শাস্ত্রমতে হিন্দু বন্ধুর পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন মুসলিম ব্যক্তি। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন হুগলির মগরার বাসিন্দা যোগেন্দ্র প্রসাদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হার মানেন তিনি। ১১ এপ্রিল ৫৫ বছর বয়সে মারা যান ওই প্রৌঢ়। তাঁর মৃত্যুর পর যোগেন্দ্রর পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন বন্ধু মহম্মদ শামসুদ্দিন।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কাজ করতেন যোগেন্দ্র। সেখানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অফিসই ছিল তাঁর ঘর। এই বাসস্ট্যান্ডেই তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে রানিগঞ্জ গীর্জাপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ শামসুদ্দিনের। এদিকে যোগেন্দ্রর পরিবারে কেউ ছিল না। তাই তাঁর মৃত্যুর পর পারলৌকিক ক্রিয়া কে করবেন, তা নিয়ে একটি সংশয় তৈরি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন তাঁর বন্ধু শামসুদ্দিন। নিজের কাঁধে তুলে নেন পারলৌকিক ক্রিয়ার দায়িত্ব। বন্ধুর মৃত্যুর ১৩ দিন পর রবিবার পারলৌকিক ক্রিয়ায় বসলেন শামসুদ্দিন। বন্ধুর পারলৌকিক ক্রিয়ায় বসে নিজের মস্তক মুণ্ডন করলেন তিনি। পুরোহিতের সঙ্গে বসে করলেন মন্ত্রপাঠও। স্থানীয় কর্মী ও বাসিন্দাদের আর্থিক সাহায্যে খাওয়ানো হল শ্রাদ্ধের ভোজও। শামসুদ্দিনের কথায়, “কোনও ধর্মের নয়, মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছি।” এ কাজ করতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত বলেও মনে করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, এই নিদর্শন দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ুক।
এই বিষয়ে শামসুদ্দিন জানিয়েছেন, “আমি জাত ভেদের মধ্যে নেই। মানুষ হিসেবে আমার যা মনে হয়েছে, তা আমি করেছি। কাজি নজরুল ইসলাম যখন হিন্দু মুসলিম বিচার করেননি, তখন আমাদেরও এমন করা উচিত নয়। মুসলিম হয়ে আমি যে কাজ করলাম, তাতে আমার খুব গর্ব হচ্ছে। আমি কোনও ধর্মতেই জন্ম নিইনি, তাহলে ধর্ম কীভাবে জানব?”
এই নিয়ে অরুণ গরাই নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, “আজ রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যে ঘটনা হল, তা আমার জীবনে দেখা এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এক মুসলিম বন্ধু তাঁর হিন্দু বন্ধুর জন্য যা করলেন, তা আজ গোটা সমাজের জন্য একটি আদর্শ। রানিগঞ্জের এই বার্তা আজ গোটা ভারত তথা বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।”