বলেছিল ব্যালকনি থেকে পড়ে মারা গিয়েছে বাঙালি ‘বান্ধবী’, পুলিশের জালে ‘বন্ধু’ ধরা পড়তেই প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

Dehradun: নিবেদিতার বাবা হলধর মুখোপাধ্যায় ইসিএলের কেন্দ্রা এরিয়ার ছোড়া পিটের কর্মী। মা মণিমালাদেবী গৃহবধূ। তাঁদের দুই মেয়ে।

বলেছিল ব্যালকনি থেকে পড়ে মারা গিয়েছে বাঙালি 'বান্ধবী', পুলিশের জালে 'বন্ধু' ধরা পড়তেই প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
নিবেদিতার পরিবার।
Follow Us:
| Updated on: Jul 01, 2021 | 5:44 PM

দুর্গাপুর: নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়ের রহস্যমৃত্যুতে অন্ডাল পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন তাঁর মাসি। নিহত তরুণী নিবেদিতার মাসি তনুজা মিশ্র পাণ্ডবেশ্বরের রিয়েল জামবাদের বাসিন্দা। তনুজার অভিযোগ, বোনঝির মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা দেহরাদুনে যাওয়ার জন্যে পুলিশের কাছে পাস চাইতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, ১৬ জুন দুর্ঘটনার খবর পেয়েই দেহরাদুন যাওয়ার উদ্যোগ নেয় পরিবার। করোনার বিধিনিষেধ থাকায় ১৭ জুন অন্ডাল থানায় পাসের আবেদন জানায় তারা। কিন্তু পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয় বলে দাবি পরিবারের। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২১ জুন মেলে পুলিশি অনুমতি। সাতদিনের মাথায় দেহরাদুনের পথে রওনা দেয় তারা।

অন্ডালের ছোড়া হাসপাতাল সংলগ্ন ইসিএলের আবাসন এলাকায় বাড়ি নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়ের। পরিবার সূত্রে খবর, তিন বছর আগে কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকতে শুরু করেন বছর পঁচিশের এই বাঙালি তনয়া। মাঝে মধ্যে অন্ডালেও আসতেন। তবে লকডাউন, করোনার বিধি নিষেধ সব কিছুর কারণে বেশ কিছুদিন বাড়িতে আসতে পারেননি।

সূত্রের খবর, গত ২৫ এপ্রিল শেষবার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল নিবেদিতার। জানিয়েছিলেন, ‘বন্ধু’ অঙ্কিত চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছেন তিনি। কিন্তু তিন দিন পর থেকে আর নিবেদিতাকে ফোনে পায়নি পরিবার। অভিযোগ, বাড়ির লোকজনের বিষয়টি সুবিধার ঠেকেনি। এরপরই অঙ্কিতের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করেন তাঁরা। অঙ্কিত তাঁদের জানিয়েছিলেন, রাগ করে নিবেদিতা চলে গিয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নিবেদিতার এক বোনের সঙ্গে অঙ্কিত বেশ কিছুদিন নিবেদিতা সেজে নিবেদিতার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে কথাও বলেন। ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে শেষবার নিবেদিতার সঙ্গে তাঁর বাড়ির লোকের কথা হয়। তিনি বলেছিলেন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে থাকতে যাচ্ছেন। এরপর একাধিক বার নিবেদিতার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে নিবেদিতা সেজে ওই তুতো বোনের সঙ্গে কথা বলেন অঙ্কিত। কিন্তু ফোন করলেই এড়িয়ে যেতেন। তাতেই সন্দেহ হয়। এরপর চেপে ধরায় অঙ্কিত জানায় নিবেদিতা ব্যালকনি থেকে পড়ে মারা গিয়েছে।

এই ঘটনা শুনেই নিবেদিতার পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়। সেখানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সূত্র। অঙ্কিতকে গ্রেফতার করে জেরা শুরু করে পুলিশ। দেহরাদুন পুলিশ জানিয়েছে, জেরার মুখে ভেঙে পড়েন অঙ্কিত। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অঙ্কিতই নিবেদিতাকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলেন। এরপর মৃতদেহ ১৫ কিলোমিটার দূরে এক খাদের ধারে জ্বালিয়ে ফেলে দেন। মুসৌরি-কিমারি রোডে প্রায় ছ’ ঘণ্টা পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশির পর গোটা বিষয়টা স্পষ্ট হয়।

জানা গিয়েছে, দেহরাদুনের একটি সংস্থায় কাজ করতেন নিবেদিতা। সাহারণপুরের ৩১ বছর বয়সী অঙ্কিতের সঙ্গে গত বছরই আলাপ হয় তাঁর। এক বন্ধু মারফৎ পরিচয়। ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা রয়েছে অঙ্কিতের। নিবেদিতার বাবা হলধর মুখোপাধ্যায় ইসিএলের কেন্দ্রা এরিয়ার ছোড়া পিটের কর্মী। মা মণিমালাদেবী গৃহবধূ। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় অন্তরা। ছোট নিবেদিতা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নিবেদিতা স্থানীয় বহুলা শশীস্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

আরও পড়ুন: মমতার অভিযোগের পরদিনই কেন মারা গেলেন জৈন হাওয়ালা কাণ্ডের মাথা? প্রশ্ন তৃণমূলের

লেখাপড়ার থেকে সমাজসেবা মূলক কাজে বেশি আগ্রহ ছিল নিবেদিতার। দিল্লি যাওয়ার আগে পর্যন্ত বন্ধুদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালাতেন। রেল স্টেশনের ধারে থাকা দুঃস্থদের শীতবস্ত্র প্রদান, সুন্দরবনে ত্রাণ—সবেতেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন নিবেদিতা। মেয়ের এ ভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছে না মুখোপাধ্যায় পরিবার। নিবেদিতার দিদি অন্তরা মুখোপাধ্যায় জানান, বোনের খুনির চরম শাস্তির জন্য যত দূর যেতে হবে যাবেন।